যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ ও অবৈধ (মাহরাম-নন মাহরাম)

মাহরাম শব্দটি আরবী হারাম শব্দ থেকে এসেছে। ইসলামী পরিভাষায় মাহরাম দ্বারা বুঝায়, যাদেরকে বিবাহ করা হারাম বা অবৈধ এবং দেখা করা বা দেখা দেওয়া জায়েয বা বৈধ। পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য মাহরাম হলেন ১৪ জন।

আর গায়রে মাহরাম যেসব পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য বৈধ নয় এবং যাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধন বৈধ—তারা গায়রে মাহরাম

ইসলাম ধর্মে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন এবং এটি সম্পর্কিত নিয়ম-কানুন খুব স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। নিম্নে ইসলামের দৃষ্টিতে যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ এবং যাদের সঙ্গে বিয়ে অবৈধ তা উল্লেখ করা হলো।

যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ

  1. অপরিচিত নারী ও পুরুষ: সাধারণত, ইসলামে অপরিচিত নারী ও পুরুষদের মধ্যে বিয়ে বৈধ। এর অর্থ হল যাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক নেই এবং যাদের বিয়ে করা হারাম করা হয়নি, তারা একে অপরকে বিয়ে করতে পারেন।
  2. কাজিন (দুরসম্পর্কের আত্মীয়): দুরসম্পর্কের আত্মীয় বা দূর সম্পর্কের কাজিনদের মধ্যে বিয়ে বৈধ। তবে, এটি নির্ভর করে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে।
  3. বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারী: ইসলামে বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত নারীদের বিয়ে বৈধ। তাদের পুনরায় বিবাহিত হওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।

পুরুষের_মাহরাম

যাদের সঙ্গে বিয়ে অবৈধ

  1. রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়: ইসলামে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে করা হারাম। যেমন:
    • মা, মেয়ে, বোন
    • ফুফু (বাবার বোন), খালা (মায়ের বোন)
    • ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে
    • দাদী, নানী
  2. দুধের সম্পর্কের আত্মীয়: ইসলামে দুধের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে করা হারাম। দুধ মা বা দুধ ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ে করা নিষিদ্ধ।
  3. স্ত্রীর রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়:
    • স্ত্রীর মা (শাশুড়ি)
    • স্ত্রীর মেয়ে (যদি মেয়েটি অন্য পুরুষের সন্তান হয় এবং স্ত্রীর সাথে বিবাহিত হওয়ার পর বড় হয়)
  4. স্বামীর রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়:
    • স্বামীর বাবা (শ্বশুর)
    • স্বামীর ছেলে (যদি ছেলেটি অন্য নারী থেকে জন্মায় এবং স্বামীর সাথে বিবাহিত হওয়ার পর বড় হয়)

কুরআনের ভিত্তি

ইসলামে বিবাহের বৈধতা ও অবৈধতা সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে:

তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজিদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সঙ্গে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর কোনো পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে এবং দুই বোনকে একত্র (বিয়ে) করা (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা : আয়াত ২৩)

ইসলামে বিয়ের বিধান স্পষ্ট ও সুসংগঠিত। রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করে ইসলামী শরীয়ত সামাজিক ও নৈতিক বন্ধনের রক্ষা করে। অন্যদিকে, যারা বৈধ সম্পর্কের আওতায় আসে তাদের মধ্যে বিয়ে উৎসাহিত করে ইসলাম সামাজিক স্থিতি ও সুখ নিশ্চিত করে। ইসলামী বিধান মেনে বিয়ে করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব এবং এটি তাদের জন্য কল্যাণকর।

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারী-পুরুষকে কোরআনের নির্দেশ মেনে  মাহরাম-গায়রে মাহরাম বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.