মানব সভ্যতা বিকাশের জন্য দরকার সমাজ ও রাষ্ট্র। সমাজের প্রথম সোপান হলো পরিবার। পারিবারিক জীবন শুরু হয় বিয়ের মাধ্যমেই। কাজেই মানব সভ্যতা বিকাশে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন পুরুষ এবং একজন নারীর মাঝে একসাথে বসবাস করার শরিয়ত মোতাবেক যে বন্ধন স্থাপিত হয়, তারই নাম বিবাহ।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ের গুরুত্ব
বিয়ে প্রত্যেকটি পুরুষ ও নারীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারী-পুরুষের হৃদয়ে প্রশান্তি লাভের নির্ভরযোগ্য এক আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিবাহবন্ধন। নারী পুরুষের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়ে হচ্ছে একমাত্র বৈধ উপায় এবং মানুষের চরিত্র রক্ষার হাতিয়ার। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যেক ধর্মেই কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও কোন ধর্মেই বিয়ে বিহীন সহবস্থান গ্রহণ করে না।
এইজন্য মানবতার ধর্ম, আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবন বিধান ইসলাম বিয়ে করার জন্য উৎসাহিত করেছে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরানূল কারীমে বলেছেন, “তোমার পছন্দ অনুযায়ী তুমি বিবাহ কর।”
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার ক্ষমতা আছে সে যেন বিয়ে করে। কেননা, তা চক্ষুকে নত করে এবং লজ্জাস্থানকে অধিক হেফাজত করে। আর যে ব্যক্তি বিয়ে করতে সক্ষম নয়, সে যেন রোজা রাখে।” (বুখারি, মুসলিম)
বুখারী শরিফের বিয়ে সম্পর্কে বলা হয়েছে, “একদিন নবীজি (সাঃ) এর কাছে তিন জন লোক এসে তাঁর স্ত্রীর কাছে নবীজি (সাঃ) এর ইবাদত এর কথা জেনে মন্তব্য করলেন, কোথায় আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যার সমস্ত গুনাহ্ আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিয়েছেন! আর কোথায় আমরা গুনাহ্ এর সমুদ্রে ডুবে আছি । তখন প্রথম লোক বললো, আমি সারারাত নামায পরবো। দ্বিতীয় লোক বললো, আমি সারাদিন রোযা রাখবো। তৃতীয় লোক বললো, আমি কোন দিন বিয়ে করবো না, নারী সঙ্গ ত্যাগ করবো।”
নবীজি (সাঃ) এই কথা জানতে পেরে তাদের বলেন, তোমরা কি এই ধরণের কথা বলেছো? শোনো তাহলে: “তোমাদের মাঝে সবচেয়ে বড় মুত্তাকী হলাম আমি তবুও আমি নামায আদায় করি, রোযা রাখি, ইফতার করি, বিয়ে শাদিও করি, আবার স্ত্রীর কাছেও যাই। যারা আমার এই তরিকা মানবেনা তারা আমার দলভুক্ত নয়।”
সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ের গুরুত্ব
মানুষ সামাজিক জীব, মানুষ কখনো একা থাকতে পারে না। একসাথে থাকার যাত্রা শুরু হয় বিয়ের মাধমেই, বিয়ের মাধ্যমেই দুটি মানুষ একসাথে যাত্রা শুরু করে, একে অপরের সাথে সকল আবেগ, অনুভুতি, দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করে থাকে। বিয়ের মাধ্যমেই একজন পুরুষ এবং একজন নারী একে অপরের সকল কাজকর্মের সঙ্গি হয়ে যায়। তাদের মাঝে প্রেম প্রীতি, ভালোবাসা গড়ে ওঠে এবং সন্তান-সন্ততি লাভ করে। সুতরাং বলা যায় মানব জীবনে বংশ রক্ষার ধারা বিবাহ বন্ধনে বাঁধা। এটি একটি পরিবারের মূল স্তম্ভ। তাই বলা যায়, বিয়ে একজন অসম্পূর্ণ মানুষ কে সম্পূর্ণ করে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ের গুরুত্ব
শুধু ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। হার্ভার্ড হেলথ পাবলিকেশন আমেরিকাতে ১,২৭,৫৪৫ জন মানুষের উপর এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে যে, বিবাহিত পুরুষেরা, অবিবাহিত পুরুষদের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকে এবং বেশি দিন বাঁচে। গত ১৫০ বছরের গবেষনায়ও দেখা গিয়েছে যে, বিবাহ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। জাপানের বিজ্ঞানীদের মতে, যে সমস্ত লোকেরা কখনোই বিয়ে করেনি, তাদের ক্ষেত্রে কার্ডিওভাসকুলার রোগের (হৃদরোগ) সম্ভাবনা অন্যান্য বিবাহিত মানুষের চেয়ে তিন গুণ বেশি হয়ে থাকে। আরও বলা হয়েছে যে, বিয়ের সাথে সাথে উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রেস ও হার্ট এ্যাটাক এর ঝুঁকিও হ্রাস পায়।