বিবাহ একটি মানবিক পবিত্র বন্ধন যা দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী শরিয়তে বিবাহের কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে, যা পূরণ না হলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। নিম্নে ইসলামী বিবাহের শর্ত সমূহ আলোচনা করা হলো:
বিবাহের প্রধান শর্ত ৫ টি:
১. স্বামী-স্ত্রী নির্ধারিত হওয়া:
পুরো নাম এবং পরিবারের ইতিহাস: উভয় পক্ষের নাম, পরিবার, বংশধর, এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। এটি প্রতারণা বা ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে সহায়ক।
পারস্পরিক সম্মতি: উভয় পক্ষকে বিবাহে সম্মত হতে হবে এবং এর জন্য তাদের একে অপরের পরিচয় এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার।
আইনি শর্তাবলী: নিশ্চিত করতে হবে যে, কেউ আগে থেকেই বিবাহিত নয় (যদি একাধিক বিবাহের অনুমতি না থাকে) এবং উভয় পক্ষই ইসলামী বিধি অনুযায়ী বিবাহের জন্য উপযুক্ত। এর উদ্দেশ্য হল নিশ্চিত করা যে বিবাহটি বৈধ এবং উভয় পক্ষই প্রবৃদ্ধি, প্রতারণা বা ভুল বোঝাবুঝি ছাড়াই এটি গ্রহণ করছে। একে অপরের পরিচয় এবং পটভূমি জানার মাধ্যমে উভয় পক্ষ নিশ্চিত হতে পারে যে তারা পূর্ণ অবগতিতে এবং সম্মতিতে বিবাহে প্রবেশ করছে।
কোনো অজ্ঞাত বা অজানা ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বৈধ নয়: অজ্ঞাত বা অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বৈধ নয়। এই নীতিটি নির্দেশ করে যে, বিবাহের জন্য এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না, যার পরিচয়, পটভূমি বা সুনাম অজানা। এটি ব্যক্তি বিশেষত মহিলাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।
ব্যক্তিগত পরিচিতি: ইসলামে পরামর্শ দেওয়া হয় যে, উভয় পক্ষকে যথেষ্ট জানার সুযোগ থাকা উচিত। সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা পারস্পরিক পরিচিতদের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে ভুল তথ্য বা অজানা ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ থেকে বিরত থাকা যায়।
সামাজিক দায়িত্ব: ইসলাম ব্যক্তির নিরাপত্তার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ করলে পারিবারিক সহিংসতা, আর্থিক শোষণ বা অন্যান্য ক্ষতিকর পরিণতির ঝুঁকি বাড়ে। সমাজের কর্তব্য হল যে, বিবাহের ক্ষেত্রে যথাযথ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
২. স্বামী-স্ত্রীর সম্মতি:
- উভয়ের সম্মতি ছাড়া বিবাহ বৈধ নয়।
- কাউকে জোর করে বিবাহ দেওয়া নিষিদ্ধ।
- কুমারী মেয়ের চুপ থাকা সম্মতির নিদর্শন, কিন্তু অকুমারী হলে মৌখিক সম্মতি আবশ্যক।
- তবে পাগল ও নির্বোধের ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য নয়।
৩. অভিভাবকের অনুমতি:
- ইসলামী শরিয়তে মেয়ের ।
- অভিভাবক হতে হবে প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানবান, বিচক্ষণ ও ন্যায়পরায়ণ।
- অভিভাবকের ক্রম: বাবা → দাদা → ছেলে → ভাই → চাচা → অন্যান্য নিকটাত্মীয়।
৪. সাক্ষীর উপস্থিতি:
- কমপক্ষে দুইজন ন্যায়পরায়ণ, মুসলিম, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সাক্ষী থাকতে হবে।
- সাক্ষী ছাড়া বিবাহ বৈধ নয়।
৫. বিবাহের বৈধতা:
- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শরিয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ হারাম হওয়ার কোনো কারণ থাকা যাবেনা।
- যদি স্ত্রী পূর্বে অন্য কারো সঙ্গে বৈধ দাম্পত্য সম্পর্কে থাকেন এবং সেই সম্পর্ক এখনো বৈধ থাকে, তাহলে নতুন বিবাহ করা তার জন্য হারাম হবে।
- রক্ত সম্পর্কের কারণে যাদের মধ্যে বিবাহ হারাম, তাদের মধ্যে বিবাহ সম্পন্ন করা যাবেনা।
- ইদ্দত (বিচ্ছেদের পর অপেক্ষার নির্দিষ্ট সময়সীমা) পূর্ণ হওয়ার আগে কোনো নারী পুনরায় বিবাহ করতে পারবেনা।
বিয়েকে উৎসাহ দিয়ে রাছুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
“হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করার সামর্থ রাখে, তারা যেন বিবাহ করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে। আর যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে; কেননা, সাওম তার যৌনতাকে দমন করবে।” সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
উপসংহার:
বিবাহ শুধুমাত্র সামাজিক বন্ধন নয়, বরং এটি একটি ধর্মীয় দায়িত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই ইসলামী শরিয়তের শর্ত ও আদব মেনে বিবাহ সম্পন্ন করা উচিত, যাতে এটি স্বামী-স্ত্রীর জন্য কল্যাণকর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।