একটা ছোট কাল্পনিক গল্প দিয়ে শুরু করি। আরমান একজন সফল ব্যবসায়ী। মাত্র তিন বছর হয়েছে তিনি এই ব্যবসা শুরু করেছেন। দিন-রাত পরিশ্রম করেন । ব্যবসাও খুব ভাল চলছে। আরও বড় হচ্ছে। মাঝে মাঝে কাজ করতে করতে অনেক হাপিয়ে ওঠেন, কিন্তু তবুও থেমে থাকেন না। তিনি একটা স্বপ্ন নিয়ে চলেন। প্রায় অন্য সবার মতই একটা স্বপ্ন। তিনি তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে স্বচ্ছলভাবে চলবেন, তার সন্তানদের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যত গড়বেন। স্বপ্নটা খুব অবাস্তব কোন চাওয়া নয়। তার জন্য তিনি রাত-দিন পরিশ্রম করেন।
গতকাল তার পরিবারের সকলের সাথে রাতে বাইরে খেতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জরুরি কাজে আটকে যাওয়ায় তিনি যেতে পারেননি। কাজের চাপে এ রকম মাঝে মাঝেই পরিবার ও পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোর জন্য সময় করে উঠতে পারেন না।
গল্পটা কাল্পনিক হলেও আমাদের বর্তমান যান্ত্রিক শহুরে অনেকেরই জীবনের গল্প এমনই।
আমরা যদি এ গল্পটার কিছুটা গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি, তাহলেই খুব জীবন ঘনিষ্ট কিছু বিষয় আমরা উপলব্ধি করতে পারব। আমরা আসলে জীবনে কী চাই, কেন ও কীভাবে চাই? যে কাজগুলো করি, সেটাই বা কেন করি? সেটা একবার বুঝবার চেষ্টা করা খুব দরকার।
আমাদের অনেকে দিন-রাত পরিশ্রম করি, যেন আমরা আমাদের বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানরা ভাল থাকতে পারে সে কথা চিন্তা করে। যেন তারা একটু আর্থিকভাবে স্বচ্ছল জীবন পার করতে পারে, তারা যেন ভাল থাকে, তাদের মনের চাহিদাগুলো যেন পূরণ হয়। কিন্তু এখানেই আমাদের চিন্তার সাথে পরিবারের চাওয়ার একটা বিবাদ তৈরি হয়।
আমাদের প্রথমেই ভেবে দেখা দরকার- আমাদের কাছে আমাদের মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তানেরা আসলে কী চায়? তারা কি শুধু আমাদের কাছে দামি জামা-কাপড়, থাকার জন্য বাড়ি, অর্থ- এসবই চায় নাকি আমাদের কাছে তাদের চাওয়া এর থেকেও ভিন্ন কিছু?
আসলে একজন মা অথবা বাবার কাছে তার সন্তানের, একজন স্ত্রীর কাছে তার স্বামীর, একজন সন্তানের কাছে তার পিতার অর্থের থেকে তার একটু ভালবাসা, তাদের সাথে একটু হেসে কথা বলা, তাদের সাথে কিছু একান্ত সময় কাটানো অনেক বেশি চাওয়ার এবং পাওয়ার। অনেক অর্থ নয়, আপনার কিছুটা ভালবাসাই আপনার পরিবারের সকলের সাথে আপনার আত্মিক বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
আপনি যেহেতু আপনার পরিবারের সকলের সুখের জন্যই দিন-রাত পরিশ্রম করতে প্রস্তুত, তাহলে আপনার ভাবনা ও মনোজগত কিছুটা পরিবর্তন আনা জরুরি। অর্থ অবশ্যই জরুরি, কিন্তু সাথে সাথে পরিবারের সদস্য মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তানদের কিছুটা সময় দেওয়াও অনেক জরুরি। তা না করলে এক সময় দেখতে পাবেন, যাদের জন্য আপনি দিন-রাত পরিশ্রম করছেন, তাদেরকেই আপনি এক সময় আর চিনতে পারছেন না। আপনার আর তাদের মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে বিশাল এক মানসিক দূরত্ব। হয়তো আপনার স্ত্রী আপনার জন্য আর খাবার টেবিলে অপেক্ষা করবে না, আপনার সন্তান পরীক্ষায় ভাল করে আপনাকে সবার আগে জানাতে উতলা হবে না।
তাই অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য একটু সময় বের করুন। তাদের সাথে নিজের সম্পর্ককে আরেকটু ভালবাসা ও স্নেহ দিয়ে আরও শক্তিশালী করুন। তাতে জীবন অনেক মধুময় ও প্রশান্তির হয়ে উঠবে।