মানুষের মনের অবস্থা মহান আল্লাহ জানেন। যারা বিধবা হয় বা তালাকপপ্রাপ্তা হন এবং তারা নিজেকে খুব অসহায় মনে করেন। বিশেষ করে যেসব বিধবার সন্তান আছে। সন্তানসহ বিধবাকে অনেক সময়েই পুরুষরা বিয়ে করতে চান না। যদি এসব মহিলারা আল্লাহর উপর ভরসা করতে পারেন, সবর করেন, আল্লাহ্ চাইলে তাদের মনের আশা পূরণ হবে। আল্লাহর কাছে বিধবার চাওয়া
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করবে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর (আল্লাহ্র) ইচ্ছা পূরণ করবেনই। আয়াত ৩, সূরা, ত্বালাক
আল্লাহর ওয়াদার উপর বিশ্বাস থাকলে অবশ্যই মহান আল্লাহ তাকে নিরাশ করেন না। এই বিষয়ের উপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যামানার একটি ঘটনা বর্ণনা করছিঃ
উম্মে সালামা (রাঃ) এর প্রথম বিয়ে হয়েছিল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহাবা আবু সালামা (রাঃ) এর সাথে।
উম্মে সালামা (রাঃ) এর সাথে তার স্বামী আবু সালামা (রাঃ) এর গভীর ভালবাসা ছিল। ইন্তেকালের পরেও যেন একে-অপরকে জান্নাতে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে পায় এই জন্য উম্মে ছালামা (রাঃ) একদিন তার স্বামীকে বলেছিলেন, আমি যদি আগে ইন্তেকাল করি, আপনি কি অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করবেন?
উত্তরে তার স্বামী বলছিলেন, না, তুমি আগে ইন্তেকাল করলে আমি আর বিয়ে করবো না। তবে আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি যদি আমি আগে ইন্তেকাল করি তাহলে আল্লাহ যেন তোমাকে আমার চাইতে ভাল স্বামী ব্যবস্থা করে দেয়।
আবু ছালামা (রাঃ) কোন একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে বিপদে পড়লে কি দোয়া পড়তে হবে তা শিখে এসে নিজের স্ত্রীকে শিক্ষা দিলেন যে, কেউ যদি বিপদে পড়ে তখন যদি এই দোয়া পড়ে তবে নিশ্চই তার মনের আশা আল্লাহ পুরণ করে দিবেন।
দোয়াটি হলঃ “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়াখলিফলি খাইরামমিনহা।”
অর্থঃ নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য। এবং আমরা তারই দিকে ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে আমার এ বিপদে পুরস্কৃত করুন। এবং এর চেয়ে উত্তম বস্তু বিনিময়ে দান করুন।
এর কয়েক বছর পরে ওহুদের যুদ্ধে আবু সালামা (রাঃ) আহত হয়ে মদীনার ফিরে আসেন এবং ইন্তেকাল করেন।
উম্মে সালামা (রাঃ) অনেক পবিত্র এবং আত্মসম্মানবোধ মহিলা ছিলেন। তিনি স্বামীকে অনেক ভালবাসতেন। স্বামীর জন্য কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন।
এরপরে কি হবে? তার আবার সন্তান আছে। কাকে এখন বিয়ে করবেন? নাকি একাই বাকী জীবন কাটিয়ে দিবেন? কে হবেন তার স্বামীর বদলা—
এসব চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। কারণ অন্য কাউকে তিনি তার স্বামী আবু সালামার প্রতিস্থাপন মনে করতে পারছিলেন না।
বিপদে পড়লে যে দোয়া পড়তে হয়, স্বামীর শিখানো সেই দোয়া তখন মনে পড়ে গেল। উনি দোয়া করলেন আল্লাহর কাছে।
“হে আল্লাহ এই বিপদে আমাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন এবং আমাকে উৎকৃষ্টতর বদলা দান করুন।”
দোয়ার অর্থ অনুযায়ী আল্লাহ তাকে উনার পুর্বের স্বামীর চাইতে ভাল স্বামী দান করবেন।
তবে তিনি মনে মনে ভাবলেন, আবু সালামার চাইতেও ভালো আর কেইবা হতে পারে! তবুও তিনি আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে সবর এর সিদ্ধান্ত নিলেন।
ইদ্দতকাল পূর্ণ হওয়ার পরে প্রস্তাব আসলো আবু বকর (রাঃ) এর পক্ষ থেকে।
আবু বকর (রাঃ) একজন প্রসিদ্ধ ধনী লোক এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সবচাইতে কাছের ব্যক্তি ছিলেন।
কিন্তু উম্মে সালামা (রাঃ) রাজি হলেননা।
এরপরে প্রস্তাব এল ওমর (রাঃ) এর পক্ষ থেকে। তিনি রাজি হলেননা। সবাই তার সিদ্ধান্তে অবাক হয়ে গেলেন। উম্মে সালামা (রাঃ) আসলে কি চাচ্ছেন?
নিজের দোয়ার প্রতি অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি এত বেশি ভরসা ছিল তার যে তিনি জানতেন নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। তিনি ভাবলেন আল্লাহ তাআলা তাকে তার পূর্বের স্বামীর চাইতে অবশ্যই ভাল কাউকে দিবেন।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উম্মে সালামা (রাঃ) এর এই আস্থার প্রতিদান দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একদিন তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। তিনি তখন জানালনে যে, এটাতো আমার জন্য বড়ই সৌভাগ্যের কথা। কিন্তু প্রথমত আমি ঈর্ষাপরায়ণ। (তিনি এখানে সম্ববতঃ রাসুল (সাঃ) এর অন্যান্য স্ত্রীদের ব্যাপারে ইঙ্গিত দেন।) দ্বিতীয়ত আমি একজন বয়স্কা নারী। তৃতীয়ত আমার সন্তান আছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে জানালেন যে, আমি দোয়া করি আল্লাহ তাআলা তার ঈর্ষাপরায়ণতা দূর করে দিবেন। আর বয়স আমারওতো কম নয়। তার সন্তান যেন আমারই সন্তান হবে।
আল-হামদুলিল্লাহ এরপরে উনাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। উম্মে সালামা (রাঃ) খুশিতে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। তিনি স্বীকার করতেন যে এটা ছিল তার দোয়ার উপহার। অর্থাৎ দোয়ার বিনিময়ে তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর স্ত্রী হতে পেরেছেন।।
আমরাও যদি এভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করতে পারি, তাহলে আল্লাহতালা আমাদেরও মনের নেক আশা পূরণ করে দিবেন।
পড়ে খুব ভালো লাগলো। নতুন কিছু জানলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।
সুন্দর জীবন