বিয়েটার বয়েস গুনে গুনে তিন বছর ১০ মাস। এই তিন বছরে সদস্য সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ২০ হাজারের কোঠা। অনেক গুলো সফল বিয়ের গল্পের নিরব সাক্ষী বিয়েটা ওয়েবসাইট । কিভাবে বিয়েটার বিয়ের গল্প গুলো আস্তে আস্তে বিয়েতে গড়ায় সেটি আজ এই ব্লগের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর জন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছেন তুষার। তিনি ময়মনসিংহের ছেলে, কাজের তাগিদে এবং উন্নত জীবনযাত্রার ছোঁয়া পেতে ঢাকায় চলে আসেন তিনি বেশ কয়েক বছর আগে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ কমপ্লিট করেছেন। বর্তমানে মিরপুরে থাকেন। তিনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে কর্মরত আছেন।
চাকুরি পাওয়ার পর থেকেই মা-বাবা চাচ্ছিলেন তাকে বিয়ে করাতে। নিজেদের আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে সবাই বিয়ের জন্য চেষ্টা করছিলেন। উনি নিজেও উপলব্ধি করছিলেন যে, বিয়েটা সেরে ফেলা দরকার। বয়সতো আর কম হল না, প্রায় ৩০ এর কোঠায় বয়স। যদিও চেহারায় তারুন্যের ছাপ একটুও কমেনি।
বিভিন্ন জায়গা থেকে উনার বিয়ের জন্য প্রস্তাব আসতে লাগলো। সব কিছুই মোটামুটি পছন্দ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ম্যাচ করছিল না। তুষার এর উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি, সে এমবিএ কমপ্লিট করেছে, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করছেন। স্বভাবতই তিনি এমন একজনকে খুঁজছিলেন যার সাথে তার উচ্চতা, বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
তিনি চাচ্ছিলেন একজন সুন্দরী এবং শিক্ষিতা মেয়ে যিনি ঢাকায় থাকেন আর তার দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ বা এর আশে পাশে যেমন টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পাবনা হতে পারে; তবে ঢাকার স্থানীয় নয়।
তুষার চান তার হবু বধুর বয়েস হবে ২৫ থেকে ২৮ এর মধ্যে, পড়াশুনা কমপক্ষে অনার্স পাশ আর উচ্চতা অন্তত পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। সেই সাথে তিনি ঢাকায় জব করে বা ঢাকায় থাকতে আগ্রহী।
তিনি আরো চান তার হবু স্ত্রী হবেন আধুনিক, সুশিক্ষিত এবং সচেতন। কিন্তু এত কিছু কিভাবে মিলবে। আর তাই তিনি অপেক্ষা করছিলেন এবং মনে মনে এমন কিছু খুঁজছিলেন যেখানে মনের সব কথা খুলে বলতে পারেন।
তুষার যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়েন, তখন এক বান্ধবীকে তার ভাল লাগত। কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে তুষার বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশুনাকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
আর এখন যখন তুষার নিজেকে বিয়ের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন তখন আর পছন্দমত পাত্রী পাচ্ছেন না। কারণ তুষার যেমন চাচ্ছেন সেইরকম সব দিক দিয়ে মিল পাওয়া যাচ্ছিলনা। কাউকে তুষারের পছন্দ হলে তারা তুষারকে পছন্দ করছিলনা; আবার তুষারকে যে পাত্রী পক্ষ পছন্দ করছিল তাকে আবার তুষার পছন্দ করছিলেননা।
তুষার খুবই চিন্তায় পড়ে গেলেন। এখন কি করা যায় ভাবতে লাগলেন। তুষারের বন্ধুরা অবশ্য তাকে সাহস দিলেন এবং অপেক্ষা করতে বললেন। কিন্তু স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।
অপরদিকে, টাঙ্গাইলের সায়মা খন্দকার ব্রাক ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করে চাকুরির জন্য চেষ্টা করছেন। আর পরিবারের সবাই যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছেন তাকে।
সবাই তার জন্য পাত্র খুঁজছিলেন কিন্তু পছন্দ মত পাত্র পাচ্ছিলেন না।
একদিন তার খুব কাছের এক বান্ধবীর বিয়ের খবর পেলেন সায়মা।
সায়মা, তার বান্ধবীর কাছে জানতে চাইলেন কিভাবে সব মিলে গেল পছন্দমত। তার বান্ধবীর কাছেই তিনি প্রথম বিয়েটা ডট কম সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তার বান্ধবী তাকেও বিয়েটাতে একাউন্ট ওপেন করার পরামর্শ দিল।
সায়মা এখন বিয়েটার সদস্য হলেন এবং তার সম্পর্কে যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য দিলেন এবং তার পছন্দ সম্পর্কেও স্পষ্ট ভাবে লিখলেন তার বিয়েটা প্রোফাইলে।
ঠিক তার পরের দিন বিয়েটা থেকে ফোন আসলো ভেরিফাই এর জন্য। সায়মা সবকিছু সুন্দর করে তাদের কে জানিয়ে দিলেন।
অন্য দিকে তুষার ইতিমধ্যে বিয়েটাতে একাউন্ট ওপেন করেছেন। তিনিও সায়মার মত পাত্রীর অপেক্ষায় আছেন।
তুষার বিয়েটাতে একাউন্ট ওপেন করার কয়েক সপ্তাহ পর একদিন আবার বিয়েটাতে লগ ইন করলেন। সেখানে তিনি অনেক পাত্রীর বায়ো-ডাটা দেখতে পেলেন। এভাবে কয়েকজন পাত্রীর সাথে তুষারের কথা হল মোবাইলে কিন্তু মন সায় দিচ্ছিলনা। এর পর দু-একজনের সাথে দেখাও করেছেন কিন্তু তার পছন্দ মত পাত্রী পেলেন না।
অবশেষ একদিন হুট করেই সায়মা খন্দকার এর প্রোফাইল চোখে পড়ল তার। আর সব দেখে সায়মার পছন্দ এর সাথে নিজের পছন্দগুলোর মিল খুঁজে পান তুষার। সায়মাকে অনুরোধ পাঠালেন তিনি।
এরপর কেটে গেল কয়েকদিন।
সায়মা তার স্মার্ট ফোনে বিয়েটা অ্যাপ ব্যবহার শুরু করলেন যাতে যে কোন সময় ফোন থেকেই বিয়েটাতে লগ ইন করতে পারেন। সায়মা দেখলেন তিনি অনেক অনুরোধ পেয়েছেন। এবার সায়মা বাছাই করতে লাগলেন যে কার অনুরোধ গ্রহণ করবেন। তুষারের প্রোফাইল সামনে আসতেই সায়মার ভিতরে কেমন যেন একটা আবেগ এসে উপস্থিত হল। কারণ তুষারের পছন্দের সাথে সায়মার পছন্দের অনেক কিছুই মিলে যাচ্ছিল।
আর বেশি সময় না নিয়ে তিনি তুষারের অনুরোধ গ্রহন করলেন। আর বিয়েটা ডট কমের নিয়ম অনুযায়ী সাথে সাথে তার ফোন নাম্বারও পেয়ে গেলেন। কিন্তু দ্বিধার কারনে তুষারকে ফোন দিতে পারলেন না। বরং অপর পক্ষ থেকে ফোন পাবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন মনে মনে।
তুষারের ছবি দেখে তার প্রতি নিজের অজান্তে একটা ভাল লাগা অনুভব হতে লাগলো সায়মার মনে। আরেকটা বিষয় হল তুষার ঢাকায় চাকুরি করে; আর তুষার চায় যে তার স্ত্রীও ঢাকায় থাকবে তার সঙ্গে। তুষারও সায়মার ফোন নাম্বার পেয়ে গিয়েছে। সায়মার অপেক্ষার অবসান হল। একদিন বিকালে ফোন এলো তুষারের নাম্বার থেকে। সায়মার মন অজানা খুশিতে ভরে উঠল, সাথে এক রাশ লজ্জা। তিনি ফোন রিসিভ করলেন।
এরপর কথা শুরু হত।
সায়মার পরিচয় পাওয়ার পর তুষার নিজের সম্পর্কে কিছু বললেন আর যেহেতু সায়মা বেশি কথা বলতে চাচ্ছিলেননা তাই তুষারও বেশি কথা না বাড়িয়ে পরে কথা হবে বলে সেদিনের মতো ফোন রেখে দিলেন।
সায়মা নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ; তবে তার মন বলছিল যে তুষার তাকে আবার ফোন দিবে। তবে একেবারে চুপচাপ বসে থাকলেন না তিনি। সায়মা তুষারের বায়ো-ডাটা আবার ভাল করে দেখে নিচ্ছেন আর ভাবছেন কি করা যায়।
বিয়েটা ডট কমের অফিসে ফোন দিলেন আর তুষার সম্পর্কে জানতে চাইলেন।
সায়মা বিয়েটার হেল্প লাইন থেকে জেনে নিলেন যে, তুষারের সম্পর্কে তারা কতটুক জানেন।
বিয়েটার কর্মকর্তারা চেক করে দেখে জানিয়ে দিলেন যে এই পাত্রের সাথে তাদের কথা হয়েছে, উনার দেওয়া তথ্য সঠিক বলে মনে হয়েছে তাদের। তবে আপনি যদি খুব আগ্রহী হন উনার ব্যপারে তাহলে নিজেদের আত্বীয় বা কাউকে দিয়ে গ্রামের বাড়ি কিংবা অফিসের খোঁজ নিতে পারেন।
অন্যদিকে তুষার ও বসে নেই। তিনি সায়মা সম্পর্কে আরো জানতে আগ্রহী। তিনি তার অফিসের এক ঘনিষ্ঠ কলিগের সাথে একদিন এই বিষয়ে পরামর্শ করেন এবং ব্রাক ইউনিভার্সিটিতে খোজ নিয়ে জানতে পারেন সত্যিই সায়মা ব্রাক ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ করেছেন, ইউনিভার্সিটিতে তিনি সুপরিচিত এবং তার রেজাল্টও ভাল।
এবার তুষার একদিন সাহস করে আবার সায়মাকে ফোন দেয়। যেহেতু তারা একে অপরের দেয়া তথ্যের সত্যতা পেয়েছেন তাই স্বচ্ছন্দে কথা বলা শুরু করেন। এভাবেই তারা ধীরে ধীরে নিজেদের সম্পর্কে আরো অনেক কিছুই জানেন। তাদের পছন্দ ও অপছন্দের কথা শেয়ার করার পর তারা একে অপরের সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। দেখা করে তাদের দুজনের সম্মতিক্রমে তারা তাদের পছন্দের ব্যাপারটি দুজনের পরিবারকে জানান।
পরবর্তী ফলাফল ধুমধাম করে বিয়ে! তুষার এবং সায়মার পরিবারের সকল আত্মীয় স্বজন মিলে বিরাট আনন্দের আয়োজনের মাধ্যমে অবশেষে তাদের নিজেদের বাড়িতেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হল। এটাই ছিল তুষার ও সায়মার পরিচয় ও বিয়ের গল্প।
পাঠক, এটি একটি কাল্পনিক বিয়ের গল্প। তবে, বিয়েটার প্রতিটি বিয়ের গল্পই এরকমই সুন্দর। আপনি কি বিয়ের জন্য পাত্র বা পাত্রী খুঁজছেন ? তাহলে আর দেরি না করে আজই বিয়েটাতে রেজিস্ট্রেশান করে ফেলুন আর খুঁজুন আপনার জীবন সঙ্গীকে।
খুব ভাল ফাতেমা আপু, আমরা বিয়েটার আরও গল্প শুনতে চাই।