দ্রুত বিয়ে করার ব্যাপারে পরামর্শ

দ্রুত বিয়ে করতে হলে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। প্রথমত মনে রাখতে হবে যে, দুনিয়ার জীবনে আমাদের সবকিছু পাওয়ার জায়গা নয়। মনের সব ইচ্ছে পূরণের জায়গা এই দুনিয়া নয়। এই দুনিয়া হল ইবাদতের জায়গা। দুনিয়াতে আমরা ইবাদত করবো, মহান আল্লাহর হুকুম মানবো আখিরাতে মনের ইচ্ছেমতো সবকিছু পাবো। মহান আল্লাহ এমন দিবেন যে, কোন মানব হৃদয় কল্পনাও করতে পারবেনা। এই ইবাদতে সহযোগিতার জন্য বিয়ে করতে হবে।

দ্বিতীয়ত মনে রাখতে হবে বিয়ে কেন দরকার অর্থাৎ কেন বিয়ে করবো?

বিয়ের মাধ্যমে চারিত্রিক সুরক্ষা হবে, স্ত্রীর সাহায্য পেলে জীবন সুন্দর হবে এই কারণে বিয়ে করবো। এই জন্য বিয়ে প্রয়োজন। আর প্রয়োজন পূরণের জন্য বিয়ে করতে হবে। কিন্তু আমরা বর্তমানে বিয়েকে কঠিন করে ফেলেছি। কারণ, বিয়ের ব্যাপারে বেশি আশা ও চিন্তা করে ফেলি। 

হাদিসে এসেছে, ৩ কাজে দেরি করতে নেই-

১। মুর্দার জানাজা দেওয়ার ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব জানাজা নামাজ পড়তে হবে।

২। নামাজের সময় হলেই নামাজ পড়তে হবে।

৩। কোনো মেয়ের যখন বিয়ের উপযুক্ত স্বামী মিলে যায় তখন দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।

অর্থাৎ কোন মেয়ের জন্য যখন উপযুক্ত স্বামী মিলে যায় তখন ঐ বিয়ে দিতে বেশি দেরি করা যাবেনা।

 

পেমেন্ট করলেই দায়িত্ব শেষ নয়

রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জামানায় সবচাইতে সহজ বিষয় ছিল বিয়ে। খুব দ্রুত বিয়ে হয়ে যেত। কারণ তারা বিয়েকে সহজচভাবে চিন্তা করতে পারত। কোণ বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে স্বামী ছাড়া থাকবে এটাকে তারা অপছন্দ করতো। 

একটি বিয়ের কথা আলোচনা করি সংক্ষেপে

ওমর (রা.) এর মেয়ে হাফসা (রা.) এর স্বামী যুদ্ধে শহিদ হন। এরপরে ওমর (রা.) আবু বকর (রা.) এর কাছে নিজের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি হননি। এরপরে ওসমান (রা.) কে প্রস্তাব দিলে তিনিও চুপ থাকেন। অল্প কিছু দিনের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দরবারে এই বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি নিজে বলেন, হাফসার জন্য ওসমান (রা.) এর চাইতে ভাল স্বামী এবং ওসমান (রা.) এর জন্য হাফসার চাইতে ভাল স্ত্রীর ব্যবস্থা হবে। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে হাফসা (রা.) কে বিয়ে করেন এবং নিজের কন্যা উম্মে কুলসুম (রা.) কে ওসমান (রা.) এর সাথে বিয়ে দেন। আবু বকর (রা.) নিজে তখন বিবাহিত, তারপরেও ওমর (রা.) তাঁর মেয়েকে তাঁর কাছে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কত সহজ সরল চিন্তা-ভাবনা। আবু বকর (রা.) ও ওসমান (রা.) বুঝতে পেরেছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তাকে বিয়ে করতে পারেন, তাই এই প্রস্তাবে কোন কথা বলেননি।

ring on hand

রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জামানায় কোন মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে, স্বামীহারা হলে অর্থাৎ বিধবা হলে, তালাকপ্রাপ্ত হলে তাকে নিয়ে সবাই চিন্তা করতো। কীভাবে বিয়ে দেওয়া যায়। বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র পক্ষের সম্পদ, সৌন্দর্য, বংশ এবং দ্বীনদারীকে দেখা হত যেন এসব ক্ষেত্রে মিল থাকে বা কাছাকাছি হয়।

এখন প্রশ্ন হল আমরাতো আর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর যুগে নেই। কথাটি সত্য। তাই বলে আমাদের ইসলামি আদর্শ একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা.)। তাদের দেখান পথে আমাদের চলতে হবে।

বিধবা মেয়েকে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিয়ে করলেন। আবার ঐ মেয়েও অর্থাৎ হাফসা (রা.) সতীনের সংসার করার জন্য নিজে রাজি ছিলেন। বর্তমানে মাছনা শুনলেই আমরা কেমন যেন অবাক হয়ে যাই। মনে করি ইসলামে মনে হয় এটা নতুন কিছু। মাছনা ছিল খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। 

রিজিক নিয়ে চিন্তা করি অথচ মহান আল্লাহ রিজিকের মালিক, তিনি সবার রিজিক দাতা। তাই বিয়ের পরে স্ত্রী ভরন পোষণের ব্যাপারে বেশি চিন্তা করে অনেক ছেলে বিয়ের বয়স হওয়া সত্ত্বেও বিয়ে করেননা।

আবার অনেক মেয়ে চিন্তা করে ছেলের কি সম্পদ আছে, সরকারি চাকুরি করে কিনা ইত্যাদি- এসব কারণে বিয়েতে দেরি হয়।

বিয়ে দ্রুত হওয়ার আমল বলতে বিয়ের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। বিভিন্নভাবে দোয়া করা যায়; নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। তবে পবিত্র কুরআনুল কারিমে সুরা ফুরকানের ৭৪ নং আয়াতের শেষ অংশে গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া আছে,

“এবং যারা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা হবে আমাদের জন্য চোখজুড়ানো। আর আপনি আমাদেরকে করুন মুত্তাকিদের জন্য অনুসরণযোগ্য।” -সুরা ফুরকান, আয়াত নং ৭৪ 

এই দোয়াটি একটি প্রসিদ্ধ দোয়া, আপনারা চেষ্টা করতে পারেন। বিয়েকে সহজভাবে চিন্তা করুন, মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.