আল-হামদুলিল্লাহ, বিয়ের দ্বারা ইমানের অর্ধেক পূর্ণতা লাভ হয়। তাই একজন মুমিনের জন্য বিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কোন কাজ করার আগে সেই বিষয়ে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হয়। একজন মুসলমান কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
মুত্তাকী হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলাঃ
আল্লাহ্ তাআলার সাধারণ নিয়ম হল, যে যেমনভাবে নিজের চরিত্রকে গড়ে তুলবেন তাকে সেই রকম জীবন সঙ্গী দান করবেন। আমরা সবাই একজন সুন্দর চরিত্রের জীবন সঙ্গী চাই কিন্তু নিজের ব্যাপারে গাফেল থাকি, তাহলে কিভাবে একজন ভাল জীবন সঙ্গী পাওয়া যেতে পারে?
এই জন্য নিজের চরিত্রকে, আমলকে সুন্দর করতে হবে। তাহলে আশা করা যায় ভাল জীবন সঙ্গী পাওয়া যাবে। ব্যতিক্রমও হতে পারে, তা ঈমানের পরীক্ষার জন্য বা তার মর্যাদাকে উন্নত করার জন্য। কিন্তু তা খুবই ব্যতিক্রম। একইভাবে সকল প্রকার পাপাচার থেকে নিজেকে হেফাজত করতে হবে তাহলে ইনশাআল্লাহ্ আশা করা যায় সুন্দর চরিত্রবান জীবন সঙ্গী জীবনে জুটবে।
দোয়া করাঃ
মহান আল্লাহর কাছে একজন নেককার, সুন্দর জীবনসঙ্গীর জন্য দোয়া করতে হবে। দোয়ার জন্য নির্দিস্ট দোয়া বা কোন সময় নেই। যেকোনভাবে, যেকোন সময় দোয়া করা যাবে।
সুরা ফুরকান এর ৭৪ নং আয়াতের শেষ অংশ পাঠ করতে হাদিসে উৎসাহিত করা হয়েছে।
দোয়াঃ “রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররি ইয়াতিনা কুররাতা আইয়ুনিও ওয়াজআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।”
এর অর্থ হচ্ছে- “হে আমাদের রাব্ব! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন যারা আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য আদর্শ স্বরুপ করুন”
দ্বীনদার পাত্র–পাত্রী খুঁজে নেওয়ার চেস্টা করাঃ
পাত্রী বা পাত্র খোঁজ করার ক্ষেত্রে দ্বীনদারীতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য্যকে প্রাধান্য দেই আর ছেলেদের ক্ষেত্রে অর্থ সম্পদকে প্রাধান্য দেই। কিন্তু ইসলামে তথা হাদিসে দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। কারণ এই দ্বীনদার অর্থাৎ দুনিয়া বিমুখ জীবন সঙ্গী পেলে সুখী হওয়া যাবে আশা করা যায়। কারণ এতে অল্পতুস্টির অভ্যাস পয়দা হবে।
অধিকার সম্পর্কে জানাঃ
স্বামী–স্ত্রীর একে অপরের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে। স্বামী তার স্ত্রীর ইজ্জত ও আব্রুর নিরাপত্তা সহ খাদ্য, পোশাক যাবতীয় ভরন পোশনের দায়িত্ব পালন করবে। স্ত্রী তার স্বামীর অনুগত হয়ে চলবে, তার ডাকে আহ্বান দিবে, স্বামীর অপছন্দনীয় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে ইত্যাদি। স্ত্রীর বিয়ের পুর্বে গৃহস্থালীর কাজ জেনে নিতে হবে। অর্থাৎ বিয়ের পরে রান্না–বাড়া সহ দৈনন্দিন সকল কাজ পূর্ব থেকে জেনে নিতে হবে।
হালাল উপার্জনের চেস্টা করাঃ
বিয়ের পর স্বামীকে পরিবারের যাবতীয় ভরন পোশনের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এই জন্য হালাল উপার্জনের ব্যাবস্থা থাকতে হবে যাতে সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে তাকে অন্যের মুখাপেক্ষী না হতে হয়। আর্থিক এবং শারিরীক সামর্থ্য না থাকলে ইসলাম তাকে বিয়ের জন্য উৎসাহিত করেনা। হালাল উপার্জন করতে হবে, কিন্তু প্রচুর পরিমাণে উপার্জন থাকতে হবে তা জরুরী নয়।
বিয়ের শুরুতেই একজন মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে তালাকের মাছআলা জানতে হবে। কারণ কোন কথার দ্বারা তালাক হয়ে যায়, তা জানা না থাকলে পরে সমস্যা হতে পারে। তালাকের পরে আফসোস না করে আগেই এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
পারিবারিক ব্যবস্থাপনা জানাঃ
একে অপরের শ্বশুর বাড়ির লোকদের অধিকার ও পর্দা সম্পর্কে জানতে হবে। কার সাথে দেখা করা যাবে, কথা বলা যাবে এবং কার সাথে যাবে না এই মাছআলা জানতে হবে। এতে পারিবারিক ব্যাবস্থাপনা সুন্দর থাকবে। স্ত্রীর জন্য আলাদা একটি ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সে নিজেকে পর্দার সাথে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা একজন পুরুষকে বিয়ের পূর্বেই করতে হবে।
ইনশাআল্লাহ্ বিয়ের আগে এসব প্রস্তুতির দ্বারা আমরা একটি সুন্দর ও সফল বিবাহিত জীবন পেতে পারি।