বিয়ে অর্ধেক দ্বীন পূরণ করে
বিয়ে মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ এক নেয়ামত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। ঈমানের পূর্ণতার সহায়ক। চারিত্রিক আত্মরক্ষার অনন্য হাতিয়ার। আদর্শ পরিবার গঠন, জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং মানসিক প্রশান্তি লাভের প্রধান উপকরণ। প্রাপ্ত বয়স্ক ও সামর্থ্যবান হলে বিলম্ব না করে বিয়ে করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। বিয়ে শুধু জৈবিক চাহিদাই নয়, বরং একটি মহান ইবাদতও বটে। বিয়ের মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন কল্যাণ সাধিত হয়। বিয়ে মানুষের জীবন পরিশীলিত, মার্জিত ও পবিত্র করে তোলে।
ইসলামী শরিয়তে বিবাহ করার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব এসেছে। এটি নবী-রসূলদের আদর্শ। বিবাহের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অসংখ্য ফেতনা, ক্ষয়-ক্ষতি, অসুখ-বিসুখ এবং নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দান করেন। তাই তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ.
‘‘হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি (বিবাহের অর্থাৎ স্ত্রীর ভরণপোষণ ও রতিক্রিয়ার) সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থান হিফাজত করে। আর যে ব্যক্তি ঐ সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোযা রাখে। কারণ, তা যৌনেন্দ্রীয় দমনকারী।’’ [বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮০নং)]
বিবাহের মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূরণ হয়
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘‘ বান্দা যখন বিবাহ করে, তখন সে তার অর্ধেক ঈমান (দ্বীন) পূর্ণ করে। অতএব বাকী অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’’ [সহীহ আল-জামিউস সাগীর ওয়া যিয়াদাতুহ হা/ ৬১৪৮]
আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘আল্লাহ যাকে পুণ্যময়ী স্ত্রী দান করেছেন, তাকে তার অর্ধেক দ্বীনে সাহায্য করেছেন। সুতরাং বাকী অর্ধেকের ব্যাপারে তার আল্লাহকে ভয় করা উচিত।’’ (ত্বাবারানীর আওসাত্ব হা/ ৯৭২, হাকেম হা/ ২৬৮১, বাইহাক্বী, সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হা/ ১৯১৬, ইমাম আলবানী এটিকে হাসান লি গাইরেহী বলেছেন। )
বিবাহের মাধ্যমে কিভাবে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ হয়?
কোন পুরুষ যদি কোন সৎ-দ্বীনদার নারীকে বিবাহ করতে পারে তাহলে সে যেন জান্নাতে যাওয়ার অর্ধেক পথ অতিক্রম করল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার দু’ চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তু (তথা মুখ ও জিহ্বা) এবং দু’ পায়ের মধ্যস্থিত বস্তু (তথা লজ্জাস্থান) এর জিম্মাদার হবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো। (বুখারী ৬৪৭৪)
সুতরাং, কোন ব্যক্তি যদি একজন সৎ নারীকে বিবাহ করে তাহলে এর মাধ্যমে তার লজ্জাস্থান হেফাজত হল। সৎ নারী এ জন্য শর্ত করা হয়েছে যে, অসৎ নারীর কারণে হয়ত সে দ্বীন ও দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে আরও ফেতনা-ফ্যাসাদ ও ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কিন্তু দ্বীনদার সৎ চরিত্রবান নারী তাকে চরিত্র হেফাযতের পাশাপাশি দ্বীন পালনে সাহায্য করবে। এতে করে সে যেন দ্বীনের পথে টিকে থাকার অর্ধেক অবলম্বন পেয়ে গেলো।
রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই নারীর প্রশংসা করেছেন, যে নারী রাতে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্বামীকে তাহাজ্জুদ আদায়ের জন্য জাগিয়ে দেয়। স্বামী যদি জাগতে না চায়, তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে হলেও তাকে জাগিয়ে দেয়। তিনি (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেই পুরুষেরও প্রশংসা করেছেন যে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্ত্রীকেও তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য জাগিয়ে দেয়। যদি তার স্ত্রী জাগতে না চায়, তাহলে স্ত্রীর মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে হলেও তাকে জাগিয়ে দেয়।
মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)
তাই বিয়ে অর্ধেক দ্বীন পূরণ করে বাকি থাকল আরও অর্ধেক। সুতরাং সে যেন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে। সে মুখকে নিয়ন্ত্রণ করবে। মুখে হারাম খাবার ও পানীয় প্রবেশ করাবে না, ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কোন কথা বলবে না। এভাবে সে দ্বীনের বাকি অর্ধেক পূরণ করবে।