বিয়েটা ডটকম বনাম ঘটক

বিয়ের খুব জনপ্রিয় এবং প্রাচীন প্রদ্ধতি হল ঘটকের দ্বারা বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করা। ঘটক সাহেবের কাছে একসময় মানুষ তাদের সন্তানের জন্য কখনও নিজের বিয়ের জন্য পাত্র/ পাত্রীর দারস্থ হতেন। ঘটক সাহেবরা এই মহান কাজকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় আনন্দের সাথে করতেন। বিয়ে সংঘটিত হলে বর পক্ষ বা কনে পক্ষ কখনো উভয় পক্ষ ঘটক সাহেবকে সম্মানিত করতেন। বিয়েটা ডটকম বনাম ঘটক। 

ঘটক

বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতপূর্ণ কাজ, আর এই কাজে মহান আল্লাহ সন্তুস্টি হন- তাই এই কাজকে ঘটকেরা আনন্দের সাথে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। তাঁরা মহান আল্লাহকে ভয় করে উভয় পক্ষের তথ্য যা প্রকাশ করা উচিৎ তা জানিয়ে বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। বিনিময়ে খুব সামান্য কিছু পেলেই সন্তুস্ট হয়ে যেতেন, যেহেতু তাঁরা আল্লাহর কাছে পুরস্কারের আশা করতেন। এরপরে ঘটকদের সাথে মানুষের দূরত্ব বাড়তে থাকে। নিজেরাই নিজেদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে পরিবারের লোকজন যারা ঘটকের কাজ করতেন তারা বিয়ে পরবর্তী বিভিন্ন অবস্থার কারণে আর বিয়ের ব্যাপারে ঝুঁকি কম নিতে থাকে। মানুষের মধ্যে ব্যস্ততা বাড়তে থাকে, ফলে একই পরিবারের একজনের বিয়ের জন্য অন্যরা সময় বের করতে চান না বা গুরুত্ব দিতে চান না। ফলে ঘটকের সংখ্যা কমতে থাকে।

কেন বিয়েটা ডটকমের সৃষ্টি হল?

বর্তমানে আমরা প্রতিদিন প্রায় প্রতি মুহুর্তে অনলাইন নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিদিনের কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে যাচ্ছে এই অনলাইন। পত্রিকা দেখা, আবহাওয়ার পুর্বাভাস, বিদ্যুৎ বিল সহ বহু প্রকার বিল প্রদান, পরস্পর যোগাযোগ, লেনদেন, ডকুমেন্টস আদান প্রদান, রাস্তায় বেরিয়ে গাড়ির সন্ধান, ঘরে বাসা বাজার করা, অফিসের কাজ করা ইত্যাদি কারণে আমরা অনলাইন নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। বিয়ের মত একটি গুরুত্বপপূর্ণ বিষয় কেন বাদ যাবে অনলাইন থেকে। আমাদের বাংলাদেশে এই ধারনা নতুন হলেও ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি পাশের দেশ ভারতেও কিন্তু অনলাইনে পাত্র-পাত্রী খোঁজার প্রচলন নতুন নয়।

অল্প টাকায় অল্প সময়ে সঠিক পাত্র-পাত্রী যাতে মানুষ খুঁজে পেতে পারে, মানুষ ধোঁকা থেকে বাঁচতে পারে, নিজের পছন্দের মানুষকে নিজেই খুঁজে নিতে পারে, ব্যস্ততার ফাঁকে কারও উপর নির্ভরশীল না হয়ে।  নিজের আত্মীয়  স্বজনদের কাছে ধরনা না দিয়েও যাতে নিজের সন্তানের জন্য বা ভাই-বোনের জন্য সঠিক মানুষকে খুঁজে পেতে পারেন—এসব ধারনা থেকে বিয়েটা ডট কমের সৃষ্টি হয়েছে।

দাম্পত্য জীবনে অশান্তি

বিয়েটা ডট কমের সাথে ঘটকদের পার্থক্য-

(১) খোঁজ করাঃ বিয়েটা ডট কমে নিজের পছন্দের মানুষকে নিজেই খুঁজে নিতে হয়। অন্যদিকে ঘটক সাহেব খুঁজে দেন, পাত্র-পাত্রীরা শুধু বাছাই করেন। 

(২) পাত্র-পাত্রীর সংখ্যাঃ  নিজের পছন্দের সাথে মিল রেখে শত শত পাত্র-পাত্রীর সিভি দেখা সম্ভব বিয়েটা ডট কমে। অন্যদিকে ঘটক সাহেবের কাছে এই এই সংখ্যা তুলনামুলক কম থাকে।

(৩) মিলঃ বিয়েটা ডট কমে রয়েছে বায়ো-ডাটা এবং পছন্দের সাথে মিল রেখে একে অপরের তথ্য দেখার সহজ সুযোগ। মুহূর্তের মধ্যে শত-শত পাত্র-পাত্রীর সাথে নিজেকে মিলানোর সুযোগ। ঘটক সাহেবও এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবেন কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে শত-শত বায়োডাটার মধ্যে বাছাই সম্ভব নয়। 

(৪) যোগাযোগের মাধ্যমঃ পছন্দ হলেই প্ল্যান আপগ্রেড করে অনুরোধ সরাসরি পাঠানো যায় বিয়েটা ডট কমের মাধ্যমে। আর উভয়ের পছন্দ হলেই ফোন নাম্বার ও ঠিকানা মেসেজ পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। আর বিয়েও চুপিচুপি করা সম্ভব অর্থাৎ বিয়ের খবর বিয়েটা ডট কমে না জানালে কেউ জানতে পারবেনা। ঘটক সাহেবের সাহায্য ছাড়া বা অনুমতি ছাড়া যোগাযোগের কোন মাধ্যম পাওয়া সাধারণত সম্ভব না। হলেও বিয়ে সম্ভব না। 

(৫) খরচঃ বিয়েটাতে সর্বচ্চ প্লানের দাম ৮ হাজার টাকা, ৯ মাস মেয়াদ, ১০০ জনকে যোগাযোগের অনুরোধ পাঠানো সম্ভব। মানে অব্যার্থ প্ল্যান। আর কেউ আপনাকে পছন্দ করলে টাকা-পয়সা একটাও খরচ না করেই বিয়ে সম্ভব। ঘটক সাহেবদের মধ্যে অনেক প্রকার আছেন। তবে যারা পেশাদার তাদেরকেও একটি নির্দিস্ট খরচ শুরুতেও দিতে হয় এবং বিয়ে হলে শেষেও দিতে হয়। আর তার পরিমাণ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে।  তবে ১৫ হাজার থেকে শুরু করে লাখ পর্যন্তও হতে পারে।  

(৬) প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকঃ বিয়েটাতে কাউকে অনুরোধ পাঠাতে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা খরচ হতে পারে।যোগাযোগের অনুরোধ গৃহীত হলেই এই টাকা কাটা হবে। নাহলে হবেনা। আর এরপরে ফোন নাম্বার- ঠিকানায় খোঁজ  নিয়ে তথ্য ভুল মনে হলে ফিরে আসতে হবে। আর এতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা ঐ সর্বোচ্চ  ১০০ টাকাই।কারণ বিয়েটা থেকে কেউ আপনাকে প্রেসার দিয়ে বিয়ে দেওয়ার চেস্টা করবেনা।

ম্যাট্রিমনি সাইটের প্রয়োজনীয়তা

ঘটক সাহেব জানেন বিয়ে না দিতে পারলে তার ক্ষতি। বিয়ে দিতে পারলেই কিছু পাওয়া যাবে। তাই তারা  সাধারণত (অনেকের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী জানতে পেরেছি) একটু তাড়াতাড়ি এই কাজ সারতে চান। আর এতে বড় ক্ষতি হল, সব কিছু ঠিক না থাকলেও অনেকে সংসার চালিয়ে যান কিন্তু কেউ কেউ আর না পেরে বিকল্প পথ দেখেন।

 

ঘটক আপনার দায়িত্ব নিবে ফলে উনাদের কস্ট অনেক বেশি হয়। তাই পারিশ্রমিক একটু বেশি হতেই পারে। কিন্তু বিয়েটা ডট কমও আপনার দায়িত্ব নিচ্ছে তবে আপনাকে সামনে রেখে, স্বাধীনতা দিয়ে।

 

শেয়ার করুন

3 thoughts on “বিয়েটা ডটকম বনাম ঘটক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.