বর্তমান সমাজে সবচাইতে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে তালাক। খুব সহজে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী সামান্য ঝগড়াঝাঁটি, মনোমালিন্য এর কারণে একে অপরকে তালাক দিয়ে দিচ্ছে। তালাক দেওয়ার সময় অনেকে মনে করে তার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কিন্তু পরে অধিকাংশরাই আফসোস করে যে তাঁর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল । তখন তাদের এই আফসোস কোন কাজে আসে না। একসময় হতাশা তাকে ঘিরে ধরে। অনেকে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। আর এই তালাক আগে স্বামী দ্বারা বেশি সংঘটিত হতো। কিন্তু বর্তমানে স্ত্রী কর্তৃক তালাক প্রচুর হচ্ছে। যেহেতু সরকারি আইন মোতাবেক মেয়েরাও তালাক দিতে পারবে। এর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এই তালাক কেন এত বেশি হচ্ছে তা নিয়ে সবাই চিন্তিত।
আমাদের নিজেদের আশেপাশে দেখা বিভিন্ন তালাকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের থেকে কিছু আলোচনা এখানে করবো বিশেষ করে স্ত্রী বা মেয়েদের দ্বারা তালাক হওয়ার কারণ নিয়েঃ
১। মেয়েরা অল্পতেই হতাশ হয়ে যায়ঃ যেসব মেয়েরা তালাক দেয় তাদের ভিতরে আসলে অল্পতেই হতাশা কাজ করে। তারা যখন তালাক দেয় তখন এর পরিণতি কি হবে চিন্তা করতে পারে না। স্বামীর সামান্য তো অবহেলা বা কোন বিষয়ে মনোমালিন্য বা কোন বিষয় দ্বিমতে তারা হতাশ হয়ে যায়। মেয়েরা ভাবে তাদের স্বামী মনে হয় সারা জীবনই এরকম থাকবে। কোন পরিবর্তন হবে না। সে কখনো ভালো হবে না। সে কখনো আমাকে সম্মান করবে না। সে কখনো আমার মতামতকে গুরুত্ব দিবে না ইত্যাদি। যার ফলে তারা অতি দ্রুত হতাশ হয়ে যায় এবং তালাকের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। কিন্তু যদি একটু সবর করতো তাহলেই দেখা যেত তার স্বামীর স্বভাবে পরিবর্তন এসে গেছে। আর এই সুন্দর সম্পর্কটাও টিকে যেত।
২। শয়তানের ওছওয়াছাঃ মানুষদেরকে ক্ষতি করা, বিভ্রান্ত করা, অশান্তির সৃষ্টি করা শয়তানের কাজ। শয়তান সব সময় আদম সন্তানের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করতে থাকে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে তালাকের দ্বারা। তালাকের মাধ্যমে সে আসলে মানুষদেরকে হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত করতে চায়। হতাশার দ্বারা একসময় এসব মেয়েদেরকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পরামর্শ দেয়। যে এই শয়তানের পরামর্শ বুঝতে পারে না সে এই ধোঁকায় পড়ে নিজের জীবন নষ্ট করে। অন্যদিকে যদি তার সন্তান থাকে তাদের বিরাট ক্ষতি সাধিত হয়। তাদের সন্তানরা আর সুষ্ঠুভাবে বেরে উঠতে পারে না। এভাবে পরিবারে ক্ষতি সাধিত হয়। পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র সব জায়গায় এই ক্ষতির প্রভাব পড়ে। সুন্দর একটি পরিবেশ ছাড়া বা পরিবার ছাড়া ভাল মানুষ গড়ে তোলা সম্ভব হয়না। যে পরিবারে বাবা মায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকে না সেই পরিবারের সন্তানেরা সহজে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। তারা সমাজের বোঝা হয়ে যায় এবং তাদের দ্বারা সমাজের বিভিন্ন খারাপ কাজ সংঘটিত হয়। এভাবে তালাকের দ্বারা শয়তান মানুষের বিরাট ক্ষতি সাধন করে।
৩। সামনে আরো ভাল কিছু আছেঃ তালাক দেওয়ার পর মেয়েরা মনে করে সামনে তাদের আরো ভালো কিছু আছে। অর্থাৎ ভালো স্বামী পাবে ভালো শাশুড়ি ভালো পরিবার সম্পদ ভালো ব্যবহার ইত্যাদি। আসলে কি অন্য জায়গা বিয়ে হলে ভালো স্বামী পাবে। না অন্য জায়গায় বিয়ে হলেই ভালো স্বামী পাবে কোন নিশ্চয়তা নেই। এমন হতে পারে সেই স্বামী আগে স্বামীর চাইতে আরো বেশি খারাপ হবে। শাশুড়ি, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আরো বেশি খারাপ হবে। তাদের ব্যবহার আরো খারাপ হবে ইত্যাদি। এছাড়া আরেকটি জিনিস নতুন পরিবার থেকে আসতে পারে সেটা হলো অবহেলা এবং আগে বিয়ে হয়েছিল এই কথা বলে মানসিকভাবে ছোট করে রাখা ইত্যাদি।
৪। দুনিয়াতে কেউ পারফেক্ট নয়ঃ আমরা সবকিছু পারফেক্ট পেতে চাই। কিন্তু দুনিয়াতে আসলে কেউ পারফেক্ট নন। কোন না কোন সমস্যা সবারই আছে। কেউ হয়তো দেখতে সুন্দর কিন্তু সে পর নারীতে সহজেই আকৃষ্ট হতে পারে। যাকে পরকীয়া বলে। এটা কিন্তু কোন মেয়েই মেনে নেবেনা। আবার স্বামীর ইনকাম কম, দেখতে তেমন সুন্দর নয় কিন্তু সে স্ত্রীকে ভালোবাসে। এখন যদি সে আরো বেশি ইনকাম আশা করে বা আরো সুন্দর স্বামী আশা করে তাহলে সমস্যা শুরু হবে। কেউ দুনিয়াতে সব দিক দিয়ে ফিট নয়। আপনি নিজেও না, কোণ না কোণ দুর্বলতা আপনার আছে। তাই অন্যের দুর্বলতাকে বড় করে দেখা যাবেনা।
৫। অন্যের সাথে তুলনাঃ নিজের স্বামীকে অন্যের সাথে তুলনা করা। এটা এক বিরাট সমস্যা। অন্যের স্বামীর কি আছে কি নেই এগুলোর সাথে নিজের স্বামীর তুলনা করে তখন আরেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। অন্যের স্বামীর অনেক কিছুই থাকতে পারে যা আপনার স্বামী নেই। এখন যদি সে সব আপনি নিজের স্বামীর মধ্যে পাওয়ার আশা করেন তাহলে সমস্যা হবে। নিজের স্বামীকে যেভাবে দেখতে চান সেভাবে তাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। কিছুটা পরিবর্তন অবশ্যই সম্ভব, তবে একেবারে সবকিছু পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাঁর কিছু বিষয়ে ছাড় দিতেই হবে। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকলে অশান্তি হবে। যার পরিনতিতে ডিভোর্স হতে পারে।
৬। স্বাবলম্বী হওয়াঃ মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কারনে স্বামীকে অতটা প্রাধান্য দেয়না। তাঁর আর্থিক সব চাহিদা নিজেই পুরণ করতে পারে। ফলে স্বামীর প্রতি সম্মান, স্বামীর কথার গুরুত্ব তাঁর কাছে একটু হলেও কমে যায়। স্বামী জব করে ঘরে ফিরে স্ত্রীর কাছে সুন্দর ব্যবহার, ক্লান্তি দূর করার সাহায্য আশা করে কিন্তু স্ত্রীও চাকুরিজীবি বা স্বাবলম্বী সে নিজেও কারো কাছে এরকম কিছু আশা করে। স্ত্রী কিছুটা ক্লান্ত থাকায় তাঁর দ্বারা এই স্বামীকে অতটা সাহায্য করা সম্ভব হয়না। এতেও কিছুটা মনোমালিন্য সৃষ্টি হতে পারে।
৭। ইসলাম না বুঝাঃ ইসলামের মুল বক্তব্য হল, দুনিয়া ইবাদতের জায়গা। এখানে নিজের আশা পুরণ বা ভোগ বিলাসের জায়গা নয়। নামাজ, পর্দা যেমন ইবাদত তেমনি অল্পে তুস্টি থাকা, অপছন্দনীয় বিষয়ের উপর সবর করা, দুনিয়াকে পরিক্ষার জায়গা মনে করা ইত্যাদিও ইবাদত- এই কথা বুঝতে না পারাই হল ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়া। দুনিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া অর্থ্যাৎ দুনিয়ার সামান্য লাভ বা লসে হতাশ হয়ে যাওয়া। এসব কারণ থেকেই বেশি ডিভোর্স হচ্ছে।
এছাড়া বহু কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে, তবে এটা কোন ভাল সমাধান নয়। দুনিয়াতে সমস্যা সব সময়ই থাকবে, এসব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে এগিয়ে যাওয়ার নাম জীবন। আর দুনিয়ার জীবন একদিন শেষ হবেই মরণের মাধ্যমে। আর মরণের পরে দুনিয়ার কোন সমস্যা আপনাকে ধরতে পারবেনা। ঈমানের সাথে মরণ হলে দুনিয়ার সমস্যায় সবর করার কারণে আপনি মহান আল্লাহর কাছে সম্মানিত হবেন। অর্থাৎ দুনিয়ার সমস্যাতে সবর করাই আপনার জন্য পুরস্কার পাওয়ার কারণ হয়ে যাবে।