বিয়ের উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন অহেতুক ভয়ের কারণে আমরা অনেক সময় বিয়ে করার মতন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। বিয়ের কথা চিন্তা করলেই সবার আগে মনের ভিতর বিভিন্ন নেতিবাচক বিষয় এসে যায়।
যেমন স্ত্রীর ভরন পোষণ, বিয়ের জন্য বিরাট অনুষ্ঠান, আত্মীয় এবং বন্ধুদের সবাইকে দাওয়াত দেওয়া, সারা জীবন স্ত্রীর সাথে মিলে মিশে চলা, মা-বাবাকে ম্যানেজ করা ইত্যাদি।
স্ত্রী মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য উপহার। এসব চিন্তা করে বিয়ের উপযুক্ত হয়েও আমরা সাহস করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলি, এমনকি এমন সময় এসে সিদ্ধান্ত নেই যখন আর বিয়ে করার সময় প্রায় শেষ হয়ে গেছে। স্ত্রী আপনার জন্য আসলেই মহান আল্লাহর উপহার। স্ত্রীকে পেলে আপনার জীবনে নতুন অধ্যায় সূচিত হবে। পজিটিভভাবে চিন্তা করুন, অন্তরে আনন্দ পাবেন। কারণ স্ত্রী আনন্দের বিষয়, যে আনন্দ দুনিয়ার কেউ দিতে সক্ষম নয় সেটা কেবল আপনার স্ত্রী দিতে পারবে।
স্ত্রী কীভাবে উপহার হল দেখুন-
(১) স্ত্রী এক হালাল, বিশ্বস্ত সঙ্গীঃ যে অপেক্ষায় আপনি সারা জীবন ছিলেন তা দিতে আপনার স্ত্রী প্রস্তুত। হালাল এক সম্পর্ক যেখানে রয়েছে অনাবিল আনন্দ। একজন মেয়ের সারা জীবনের অহংকার তাঁর সতীত্ব যাকে একজন মেয়ে সব চাইতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। কিন্তু সে তাঁর স্বামীর সামনে সমস্ত ভালোবাসে উজার করে দিতে প্রস্তুত। এছাড়া সারা জীবন সে আপনার পাশে ছায়ার মতন থাকবে যেন এক বিশ্বস্ত সঙ্গী। এরকম বিশ্বস্ত সঙ্গী স্ত্রী ছাড়া কোথাও আপনি খুঁজে পাবেন না।
(২) স্ত্রী সারা জীবন আপনাকে রান্না করে খাওয়াবেঃ আমরা বিয়ের কথা চিন্তা করলেই তাকে ভরন পোষণের কথা চিন্তা করি। তাকে সারাজীবন খানাপিনা, পোশাক ইত্যাদি দিতে হবে। কিন্তু সে আপনাকে সারা জীবন আদর দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে রান্না করে খাওয়াবে, বাতাস দিবে হাতপাখা দিয়ে তা কখনও চিন্তা করিনা। হ্যাঁ, সে নিজেও খাবে। তবে আপনি যদি কাউকে রান্না করার জন্য রাখতেন তাকে কি খানা খেতে দিতেন না? অবশ্যই দিতেন, বরং পাশাপাশি বেতনও দিতেন। কিন্তু স্ত্রীকে কেউ বেতন দেয়?
(৩) স্ত্রী আপনার পরামর্শ দাতাঃ একজন স্ত্রী পাওয়া মানে একজন বিশ্বস্ত পরামর্শ দাতা পাওয়া। জীবনে বিভিন্ন পরিস্থিতি আসে তখন একজন পরামর্শ দাতার প্রয়োজন হয়। রাছুলুল্লাহ (সা.) নিজে স্ত্রীদের থেকে পরামর্শ নিতেন। তাই একজন শিক্ষিত স্ত্রীকে পেলেন মানে একজন শিক্ষিত পরামর্শ দাতা পেলেন যিনি আপনাকে পরামর্শ দিয়ে জীবনে গতি এনে দিবে। জীবন আরও এগিয়ে যাবে।
(৪) স্ত্রীর বাবা-মা অথবা গার্জিয়ান পুরস্কার পাওয়ার উপযুক্তঃ বিয়ের মাধ্যমে আপনি তাদের ১৫/১৬ বছরের বিভিন্ন শ্রম ও অর্থ দিয়ে বিনিয়োগ করা একজনকে পেলেন যার পিছনে তাদের প্রচুর শ্রম ছিল। অর্থাৎ একটি মেয়ের বাবা-মা বা গার্জিয়ান তাকে ছোট বেলা থেকে মানুষ করার জন্য কত কষ্ট সহ্য করেন। তাঁর খানা পিনা, পোশাক, বিভিন্ন চাহিদা সাথে পড়াশুনা ইত্যাদির পিছনে শ্রমের পাশাপাশি অনেক অর্থ ব্যয় করেন। কিন্তু বিয়ের মাধ্যমের এই সন্তানকে আপনার হাতে তুলে দিচ্ছে বিনা অথচ কিছুই আশাই করছেনা। তাদের এই মেয়ে সারা জীবন এখন আপনার পক্ষে, আপনার হয়ে চলবে, আপনাকে হেল্প করবে ইত্যাদি।
(৫) স্ত্রী আপনাকে সন্তান দিবেঃ স্ত্রীর পক্ষ থেকে আপনি সব চাইতে বড় সম্পদ পাবেন হল সন্তান। এই সন্তান আপনাকে দুনিয়াতে শান্তি, নিরাপত্তা, মান ইজ্জতের অধিকারী ও এত আনন্দ দিবে যা কল্পনা করা সম্ভব না। সন্তান পেতে হলে বিয়ে করতে হবে, স্ত্রীকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্ত্রীর দ্বারা এরকম হাজারো উপকার পাবেন যা বলে বুঝান সম্ভব নয়।
(৬) দিন শেষ একজন আপনার জন্য অপেক্ষায় থাকেঃ এটা যে কত বড় আনন্দ অবিবাহিত লোকের বুঝে আসবেনা। আপনি যখন বিয়ে করবেন, কাজ শেষে ঘরে ফিরবেন দেখবেন একজন খুব আগ্রহ নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, তিনি আপনার স্ত্রী। এই আনন্দ এত ব্যাপক বিয়ে করলে বুঝতে পারবেন।
(৭) আপনার পছন্দ অনুযায়ী খাবার, পোশাক, ঘরকে সাজিয়ে রাখবে আপনার স্ত্রীঃ আপনার স্ত্রী আপনার একজন ব্যক্তিগত সেক্রেটারির চাইতে বেশি। যেমন সে আপনার রুচি অনুযায়ী খাবার রান্না করবে, ইউটিউব থেকে আপনার জন্য নতুন রেসিপি শিখবে। আপনি কোন দিন কোন পোশাক পড়বেন সে তা ঠিক করে দিবে। আর ঘর সাজানোর কাজত মেয়েদের জন্য খুব আনন্দের। আপনার ঘরকে এত সুন্দর করে সাজিয়ে দিবে যা আপনাকে পরম শান্তির ঘুম এনে দিবে।
(৮) স্ত্রী আপনার পারসোনাল ডাক্তারঃ আপনার স্ত্রী যত সহজে আপনার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা ধরতে পারবে অন্য কেউ তা পারবেনা। আপনার স্ত্রীর সহযোগিতাতে দ্রুত আপনি শক্তিশালী হয়ে উঠবেন মানসিক এবং শারীরিকভাবে। স্ত্রী আপনার সমস্যার সঠিক সমাধান এর ব্যাপারে সবচাইতে বড় সহযোগী।
এভাবে চিন্তা করুন তাহলে স্ত্রীকে আল্লাহর দেওয়া উপহার মনে হবে, বিয়ে করতে ইচ্ছে করবে ইনশাআল্লাহ।