একজন মুছলমান কিভাবে বিয়ে করবে? মুছলমানদের জন্য কি বিয়ের ব্যাপারে ইসলামে কোন আদর্শ বা সুন্নাত আছে?
অবশ্যই বিয়ের ব্যাপারে একজন মুছলমানের জন্য ইসলামী আদর্শ রয়েছে। একজন মুছলমানের সুন্নতি বিয়ের নিয়ম নিয়ে কিছু কথা নিচে দেওয়া হল।
বিবাহের সুন্নাহসম্মত দিনঃ
বিবাহ সুন্নতসম্মত পদ্ধতিতে হওয়া দরকার। বিবাহ সুন্নাহসম্মত নাহলে এর সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয় বর-কনে এবং সংশ্লিষ্ট সবাই। ইসলামী বিবাহ মসজিদে ও জুমার দিন হওয়া উত্তম। এতে ঘোষণা ও জনসমাগম বেশি হয়।
তবে অন্য দিন ও অন্য স্থানেও বিবাহ পড়ানো যায়। বিবাহ পড়ানোর সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হলো, প্রথমে কনের কাছ থেকে ইজন বা অনুমতি নিতে হবে।
উভয়ের সম্মতিঃ বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বা বর-কনেই মুখ্য, যারা সারা জীবন একসঙ্গে ঘর-সংসার করবে। তাই বিবাহের আগে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। কোনো অবস্থায়ই কোনো ছেলে-মেয়ের অসম্মতিতে তাদের বিবাহ করতে বাধ্য করা উচিত নয়।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে। ’ (সুরা নিসা, আয়াতাংশ : ১৯)
সুন্নাতি বিয়ের খুতবাঃ
অভিভাবক (যদি বিবাহ পড়াতে সক্ষম হন) বা যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি বিবাহের খুতবা পাঠ করবেন। এরপর মেয়ের অভিভাবক বরের সামনে মেয়ের পরিচয় ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করবেন। তারপর তিনি বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবেন। অথবা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি হবু বরের কাছে বিবাহের প্রস্তাব তুলে ধরবেন। এটাকে ইসলামের ভাষায় ‘ইজাব’ বলা হয়।
বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ করে মেয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি একান্তভাবে আবশ্যক। কারণ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ হয়না। নবী করিম (সাঃ) বলেন, ‘অভিভাবক ছাড়া কোনো বিবাহ নেই। ’ (তিরমিজি)
যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি উপস্থিত মজলিসে হবু বরের উদ্দেশে বলবেন যে অমুকের মেয়ে অমুককে এত টাকা মোহরানায় আপনার কাছে বিবাহ দিলাম, আপনি বলুন ‘কবুল’ বা ‘আমি গ্রহণ করলাম’।
বিবাহ পড়ানোর সময় কমপক্ষে দুজন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে। তখন বর উচ্চ স্বরে ‘কবুল’ অথবা ‘আমি গ্রহণ করলাম’ বা সম্মতিসূচক ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলবে। এরূপ তিনবার বলা উত্তম। (বুখারি)
স্মরণ রাখতে হবে যে আগে খুতবা পাঠ করতে হবে তারপর ইজাব-কবুল (প্রস্তাব দেওয়া-নেওয়া)।
শুধু বরকেই কবুল বলাতে হবে। কনের কাছ থেকে কনের অভিভাবক শুধু অনুমতি নেবেন। বর বোবা হলে সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে ইশারা বা লেখার মাধ্যমেও বিবাহ সম্পন্ন হতে পারে।
এভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর উপস্থিত সবাই পৃথকভাবে সুন্নতি দোয়া পাঠ করবে : ‘বা-রাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বা-রাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খায়ের। ’
অর্থ : ‘আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত দিন ও তোমাদের দুজনকে কল্যাণের সঙ্গে মিলিত করুন। ’ (তিরমিজি)
বাসর রাতে করনীয়ঃ
হযরত আসমা বিনতে উমাইস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম আয়েশা রা.-এর বান্ধবী। আমি আরও কিছু মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে তাকে রসুল সা.-এর জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছি ও তার ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছি। হযরত আসমা রা. বলেন, আল্লাহর শপথ, আমরা তার ঘরে মেহমানদারি হিসেবে এক পেয়ালা দুধ ছাড়া আর কিছু পাইনি। তিনি সে পেয়ালা থেকে কিছুটা পান করলেন, এরপর আয়েশা রা.-কে দিলেন।
অল্পবয়সী মেয়েটি লজ্জাবোধ করল। তখন আমরা বললাম, আল্লাহর রসুলের হাত ফিরিয়ে দিও না; গ্রহণ করো। তখন সে ইতস্তত করে হাতে নিল এবং সেটা থেকে পান করল। অতঃপর রসুল সা. বললেন, তোমার বান্ধবীদেরকে দাও। আমরা বললাম, আমাদের চাহিদা নেই। তিনি বললেন, তোমরা ক্ষুধা ও মিথ্যা দুটোকে একত্র করোনা। (মুসনাদে আহমদ ২৬৯২৫)
একসাথে নামাজ আদায় করে দোয়া করাঃ
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) কতৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন যে, ‘স্ত্রী যখন স্বামীর কাছে যাবে, তখন স্বামী সামনে দাঁড়িয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর তারা একসঙ্গে দুই রাকাত সালাত আদায় করবে এবং মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করবে-
‘হে আল্লাহ পাক আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দান করুন আর আমার ভেতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। আপনি তাহাদের থেকে আমাকে রিজিক দান করুন আর আমার থেকে উনাদেরও রিজিকের ব্যবস্থা করে দিন। হে আল্লাহ আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণের সঙ্গে একত্রে রাখুন আর বিচ্ছেদ হলে কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটাবেন।’
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে সুন্নাহ অনুযায়ী বিয়ে করার তৌফিক দান করুন।