বিয়ে নিয়ে অনেকেই চিন্তিত, কেউ কেউ হতাশ, কারণ বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছেনা। কিছুতেই যেন মিলানো যাচ্ছেনা দুই পক্ষকে। এক পক্ষ রাজি হলে আরেক পক্ষ রাজি হচ্ছেনা। কি হলে দুই পক্ষ রাজি হবে কেউ জানেনা, বিয়ের এই চেষ্টা যেন অনবরত চাকার মতন ঘুরছে। কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে চেষ্টা ছেড়ে দিচ্ছে। বিয়ে না হওয়ার পিছনে আছে অনেক কারণ।
বিয়ে না হওয়ার এই কারণ সম্পর্কে কিছু তথ্য:
বিয়ের বয়স কত?
বিয়ের কোন নির্ধারিত বয়স সীমা আসলে নেই। এটা যার যার নিজস্ব ব্যাপার। তবে সরকারিভাবে ছেলেদের জন্য কমপক্ষে ২১ এবং মেয়েদের জন্য ১৮ ধরা হয়। কিন্তু ধর্মীয়ভাবে যেমন ইসলামে বিয়ের নির্ধারিত কোন বয়স নেই।
তাহলে কবে বিয়ে হবে?
ধর্মীয়ভাবে বিয়ের জন্য মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তান ধারণ করার যোগ্যতা বা পিরিয়ড শুরু হলেই আসলে সে বিয়ের জন্য উপযুক্ত। কারণ বিয়ের বড় একটা চাহিদা হলো সন্তান ধারণ করার যোগ্যতা অর্জন করা। যে বয়সে একজন মেয়ের পিরিয়ড শুরু হয় সেই বয়স থেকেই আসলে সে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে যায়। তবে, বিয়ের পরবর্তী জীবনের জন্য কিছু পারিবারিক, সাংসারিক কাজ জানা প্রয়োজন। কারণ বিয়ের পরে নিজের সংসার সামলাতে হবে, স্বামীকে, শ্বশুর-শাশুড়িকে ম্যানেজ করতে হবে-এ কারণে কিছুটা সাহস, শিক্ষা প্রয়োজন। আর এই পারিবারিক শিক্ষার জন্য আরো কিছুটা সময় লাগতে পারে- এটা হলো ইসলামিক মতামত।
আবার একইভাবে একজন ছেলে যখন যৌবন প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ তাঁর পুরষালী স্বভাব সৃষ্টি হয় তখন থেকেই সে আসলে বিয়ের উপযুক্ত হয়। যেমন, সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়া, নারীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব হওয়া ইত্যাদি। এরপরেও পুরুষকে বাড়তি যে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে তাহলো স্ত্রীকে ভরণপোষণের সামর্থ্য অর্জন করা। এখন বয়স নিজেরা নির্ধারণ করে নিতে হবে যেমন নারীরা ১৫/১৬ এরপরে বিয়ের জন্য আমাদের দেশে প্রায় যোগ্যতাই অর্জন করে থাকেন। অন্যদিকে পুরুষেরা যেহেতু আয়রোজগার করতে হয় তাই তারা ২০/২২ বছরেই চাইলে বিয়ে করতে পারেন।
বিয়ে না হলে কি করা উচিত?
সঠিকভাবে চেষ্টা করাঃ বিয়ে না হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল সঠিকভাবে ও আপ্রাণ চেষ্টা না করা। বিয়ের ব্যাপারে সিরিয়াস না হওয়া, এবং একটা ডেডলাইন ঠিক না করা। তাহলে বিয়ে না হলে কি করা উচিত?
বিয়ে হওয়ার সহজ উপায় হলো সঠিকভাবে চেষ্টা করা। যেমন, সরাসরি বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করা এবং এজন্য সহজ ও বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে বিয়েটা ডট কম। এখানে প্রতিদিন পাত্র-পাত্রীর নতুন প্রোফাইল তৈরি করে অনেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে শত শত প্রোফাইল; যা আপনার পছন্দদের মানুষকে খুঁজতে সাহায্য করবে।
বিয়ে না হওয়ার কারণ নিয়ে সংক্ষেপে কিছু আলোচনাঃ
সময়মত বলতে নারীরা ১৫/১৬ তে এবং পুরুষেরা ২০/২২ বছর বয়সে বিয়ে করার কথা।
কিন্তু কেন বিয়ে সময়মত হচ্ছেনা?
১। স্কুল কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাঃ
স্কুল কলেজে পড়াশুনার মধ্যে সিলেবাস অনুযায়ী এসএসসি পাস করতেই একজন ছেলে বা মেয়ের ১৫/১৬ বছর হয়ে যায়। এই সময়টাই আসলে একজন মেয়ের বিয়ের সময় ছিল। কিন্তু তাকে বুঝানো হয়েছে বা হচ্ছে তোমার জীবন কেবল শুরু। এসএসসি পাস করে এইচএসসি পাস করতে হবে, তারপরে বিয়ের চিন্তা এর আগে নয়। তুমিতো এখনও ছোট। আসলে সে পূর্ণ বিয়ের উপযুক্ত। এরপরে এইচএসসি, এরপরে বিএ/অনার্স ইত্যাদি। এভাবে বিয়ের বয়স ২৫ এর উপরে সহজেই হয়ে যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই যৌবনের মুল্যবান মুহূর্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে। চাকুরি কর, এরপরে বিয়ে কর।
চাকুরি হয়েছে, স্বাবলম্বী হও তারপরে বিয়ে কর।
২। পারিবারিক অসচেতনতাঃ
শিক্ষিত পরিবারগুলোতেই বিয়ের ব্যাপারে বেশে দেরি হয় বলে আমাদের মনে হয়েছে। শিক্ষিত বলতে স্কুল-কলেজে পড়া শিক্ষিত। এসব পরিবারে স্নাতক বা এইচএসসি-এসসি পাস মেয়েকে খুব ছোট মনে করা হয়। বয়স ২২/২৩ যেন একেবারেই কম বিয়ের জন্য। ছেলেদেরতো মাস্টার্স পাস, এরপরে চাকুরি বা ব্যবসা করা, তারপরে বিয়ে। বিয়ে না করলে কি কি সমস্যা হয় সেটা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হওয়া উচিৎ যাতে সবাই বিয়ের ব্যাপারে সচেতন হয়।
৩। চারদিকে ডিভোর্সঃ
বিয়ে না হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ এবং এর প্রভাব যা বিয়ের ব্যাপারে অনেক আতংক ছড়িয়ে আছে। বিয়ের পরে কি হবে, যদি ডিভোর্স হয়। আসলে অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন ডিভোর্স নাও হতে পারে। তাই চিন্তা না করে এগিয়ে যেতে হবে, বিয়ে করতে হবে। তা নাহলে বিয়ে দেরি হবে। বা হয়তো হবেই না!
৪। ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিতঃ বর্তমানে পড়াশুনা মানেই স্কুল-কলেজ। পূর্বে মেয়েদের জন্য সামান্য ইংরেজি-বাংলা-গণিত জানার পরে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হত। ফলে তাদের মধ্যে অল্পে তুষ্টি, বড়দের সম্মান করা, বিনয়ী আচরণ গড়ে উঠতো। এসব ধার্মিক মেয়েরা নামাজ, পর্দাতে বেশি অভ্যস্ত হওয়ায় অল্পতেই বিয়েতে রাজি হয়ে যেত। অন্যদিকে স্বামীর প্রতি ভালবাসা প্রগাঢ় হওয়াতে স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনে নিজেকে বিলিয়ে দিত। শুরু হত শান্তির সংসার। যেহেতু চাহিদা কম, স্বামীর জন্যও সে আসলে রহমত হয়ে যেত। ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া বিয়ে দেরিতে হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এজন্য দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল করতে হবে।
৫। স্বাবলম্বী হওয়ার চেস্টাঃ মেয়েরা স্বাবলম্বী হতে হতে নারীদের পুরুষের মত বয়স হয়ে যাচ্ছে। কারণ একই বয়সে একজন মেয়ে ও ছেলে মাস্টার্স পাস করছে। ফলে তাদের এই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করতে করতে বিয়ে দেরি হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পুরুষেরা স্বাবলম্বী হওয়ার লড়াই করতে করতে বিয়ের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
৬। পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসরণঃ বর্তমানে মিডিয়ার কারণে ঘরে বসেই পশ্চিমা সংস্কৃতির সাথে পরিচয় হচ্ছে আমাদের যুবক-যবতীরা। আর পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বিয়ের তেমন কোন আলোচনাই নেই। আছে বিয়ে বহির্ভুত সম্পর্কের আলোচনা। আর এসব আলোচনা দ্বারা বিয়ের প্রতি অনিহা সৃষ্টি হচ্ছে।
৭। বিবাহিত জীবনের অশান্তির সংবাদ ব্যাপক হওয়াঃ বিবাহিত জীবনের শান্তির সংবাদ প্রচার হওয়ার কোন সিস্টেম নেই। আছে বিবাহিত জীবনে অশান্তির আলোচনা। বিবাহিত জীবনের অশান্তির আলোচনা এত ব্যাপক যে বিয়ের কথা শুনলেই তরুন সমাজ চিন্তিত হয়ে পড়ছে। অথচ বিয়ের পরে শান্তি এই সংখ্যাই বেশি এবং স্বাভাবিক।
৮। অবৈধ সম্পর্কঃ বিয়ের জন্য যৌবনে প্রাপ্ত সম্পদকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে নস্ট করাকে সহজ করে দেওয়া হয়েছে। খুব সহজেই জিনার উপকরণ পাওয়াতে আর বৈধ উপায়ে বিয়ের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
৯। বিয়ের জন্য বিরাট বাজেটঃ
ধর্মীয় ভাবে সুন্নতি বিয়ের নিয়ম থাকলে বিয়ে করতে গেলে অনেক টাকা লাগেনা। কিন্তু সুন্নাতি নিয়ম না মানলে বিয়ের আয়োজন, সাজসজ্জা, বৌভাত, স্বরর্নালংকার, বরযাত্রী, উপহার, বিরাট অংকের মহরানা ইত্যাদি নিয়ে খরচ হয় বা হতে পারে- এভাবে বিয়ের খরচের কথা চিন্তা করেও বিয়ে দেরী হচ্ছে। অথচ বিয়ের জন্য এত খরচ করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
১০। আখিরাতকে ভুলে যাওয়াঃ
দুনিয়ার জীবন যেকোন সময় শেষ হবে। ইবাদত বন্দেগী করতে হবে। বিয়ে হলে নিজের ঈমান হেফাজত হবে-এসব বিষয় ভুলে যাওয়ার ফলে বিয়ে দেরী হচ্ছে।
১১। উচ্চাকাঙ্খাঃ বিয়ের ক্ষেত্রে বাস্তব অভিজ্ঞতা হচ্ছে- আদর্শ পাত্র/ পাত্রী মানে তাঁর উচ্চতা, ক্যারিয়ার, দৈহিক গঠন, সৌন্দর্য্য নায়ক বা নায়িকার মতন হতে হবে যা বাস্তবে সম্ভব নয়। আরেকটি বিষয় হল বিয়ের আগেই মনের মত মানুষ চাওয়া। অর্থাৎ যার সাথে মনের মিল হবে তাকে বিয়ে করা। বিয়ের আগেই মনের মিল হওয়া- এই ধারনাটা অবাস্তব। বিয়ের আগে একে-অপরের বিভিন্ন বিষয় দ্বিমত থাকলেও পরস্পরের শ্রদ্ধাবোধ, ত্যাগ স্বীকার ও সমঝোতা থেকে ধীরে ধীরে এই মনের মিল সৃষ্টি হয়। তাই বিয়ের আগেই সব বিষয়ে মনের মিল হবেনা, এটা আশা করার কারণেও বিয়ে দেরি হয়।
বর্তমানে বিয়ের জন্য কেউ ঝুঁকি নিতে চায়না। কিন্তু বিয়েটা ডট কমের মতন সাইট আপনার পাশে আছে, থাকবে ইনশাআল্লাহ। বিয়ের জন্য সময় ও অর্থ ব্যায়ের মনমানসিকতা থাকেলেই হবে আপনার বিয়ে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে দ্রুত বিয়ে করর পরামর্শ থাকবে, তানাহলে একসময় একাকিত্ব জীবন কাটাতে হবে যা হবে অনেক কস্টের।