আমাদের দেশে কন্যার বিয়ের জন্য তাঁর বাবা-মায়ের বহু প্রস্তুতি নিতে হয়। বহু গুন অর্জন করতে হয় একজন বাঙ্গালী কন্যাকে।
বাঙ্গালী কন্যার বিয়ের আগে কিছু বেসিক গুন থাকা দরকার যা তাঁর পরিবার থেকে সে অর্জন করে।
এসব গুন অর্জন করতেই হবে তা নয় তবে এসব গুন বিয়ের পরে ঐ কন্যার গ্রহণ যোগ্যতা শ্বশুর বাড়িতে বেড়ে যায় বা যাবে। আসলে মানুষ সবাই স্বার্থপর। স্বার্থের জন্যই সাধারণত একে-অপরকে ভালবাসে। যদি কিছু উপকার আপনার কন্যার দ্বারা সরাসরি বিয়ের পরে ঐ বাড়ির মানুষ পায় তাহলে সে অবশ্যই সবার ভালবাসার মানুষ হয়ে যাবে। জোর করে আসলে ভালবাসা পাওয়া যায়না, ভালবাসা পেতে হলে উপকারের মাধ্যমে আদায় করতে হয়।
আপনার কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার আগে কিছু গুনাবলী শিক্ষা দিন যেসব গুনের কারণে আপনার কন্যা সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠতে পারে-
১। পড়াশুনাঃ অবশ্যই শিক্ষা মানুষকে মহান করে। তাই বিয়ের আগে শিক্ষা অর্জন করা জরুরী। এই শিক্ষা পরিবার থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসায় হতে পারে। যেই লাইনেও পড়াশুনা হোক না কেন বাংলা, অংক, ইংরেজী, আরবী জ্ঞান থাকতে হবে। কারণ সংসার জীবনে এসব জ্ঞান কাজে লাগবেই। এসব জ্ঞান আপনার কন্যাকে অবশ্যই দেওয়ার চেস্টা করুন।
২। হাতের কাজঃ কোন মেয়ে বিয়ের পরে যখন শ্বশুর বাড়ি যাবে তাঁর হাতের কাজ তাকে আরো ভালবাসার মানুষ বানিয়ে দিবে সবার কাছে। তাই বিয়ের আগেই কিছু হাতে কাজ শিখে রাখা দরকার। যেমন, স্বামীর জন্য রুমাল, শ্বশুরের জন্য টুপি, শাশুশীর জন্য নকশীকরা চাঁদর ইত্যাদি বানিয়ে উপহার দিলে ওই মেয়ে সবার আনন্দের কারণ হয়ে যাবে।
৩। ইসলামিক বেসিক জ্ঞানঃ মুসলিম পরিবারের মেয়ে হিসাবে সহিহ আকিদা সম্পন্ন জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। এক মহান আল্লাহর ইবাদত করতে হবে রাছুলুল্লাহ (সাঃ) যেভাবে বলেছেন সেইভাবে। কোন মনগড়া কাজকে ইবাদত হিসাবে করা যাবেনা। শির্ক, বিদআত সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
৪। পর্দা, নামাজঃ পর্দা মেয়েদের জন্য ফরজ একটি ইবাদত। এই পর্দা কার সাথে কতটুক করতে হবে জানতে হবে। কার সামনে ১০০ ভাগ পর্দা করতে আর কার সামনে মুখ, হাতের কবজি, পায়ের পাতা বের হলে সমস্যা নেই এসব বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। সময়মত নামাজ আদায় করলে ঐ নববধূ সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
৫। সেলাই কাজ বা টেইলারিং কাজ জানাঃ পূর্বেকার মুরুব্বীরা তাদের মেয়েদেরকে যেসব বেসিক বিষয় ঘর থেকে শিক্ষা দিত তারমধ্যে অন্যতম হল দর্জির কাজ বা টেইলারিং এর কাজ। এই কাজ এইজন্য যে, যাতে নিজের সালোয়ার, কামিজ ও নিত্য প্রয়জনীয় কিছু কাজ ঘরে বসেই করতে পারে। এসব কাজ জানা থাকলে সংসারে কিছু খরচ বাঁচান যাবে এবং ঘরে বসে নিজের দক্ষতার প্রমাণ মিলবে।
৬। রান্না শিখাঃ অনেক ধনী লোকের মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যা বর্তমানে শোনা যাচ্ছে। তারা রান্না করতে জানেনা। এসব মেয়েরা মনে করে ধনী পরিবারে বিয়ে হলে কাজের লোক থাকবে আর রান্নার কাজটা তারাই করবে। ধনী পরিবারে বিয়ে হলেও রান্না শিখাটা জরুরী। রান্না একটি শিল্প ও আনন্দের বিষয়। এটা কোন অসম্মানজনক কাজ নয় বরং রান্না জানলে ঐ স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসা বেড়ে যাবে। এছাড়া বিভিন্ন সময় রান্না করার দরকার হতেই পারে, তাই বিয়ের আগে রান্না করা শিখতে হবে।
৭। বিভিন্ন ধরনের কেক, পিঠা বানান জানাঃ বর্তমানে অনলাইনের যুগ। কেউ চাইলে ঘরে বসেই কেকসহ বিভিন্ন আইটেমের খবার বানান শিখতে পারে। এসব কেক বানিয়ে নিজের পরিবারের লোকজনদেরকে মাঝে মাঝে খাওয়ালে সু-সম্পর্ক বাড়বে।
৮। স্বাস্থ্য বিষয়ে জ্ঞান থাকাঃ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিজের স্বাস্থ্য বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। নিজের শরীর যে নিজে সুস্থ রাখতে পারেনা, সে অন্যের স্বাস্থেরও যত্ন নিতে পারবেনা। তাছাড়া অসুস্থ মানুষকে নিয়ে কে বেশিদিন ব্যস্ত থাকবে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। নিয়মিত গোছল করা, পরিস্কার জামা কাপড় পরিধান করা, সময়মত খাওয়া, ঘুমানো, স্বামীর জন্য রুপচর্চা করা ইত্যাদি কাজ বিয়ের আগে থেকেই অভ্যাস করতে হবে।
৯। অর্থ সঞ্চয় ও বাজার সম্পর্কে ধারণা থাকাঃ স্বামীর সংসারে যাতে উন্নতি হয়, অর্থ সঞ্চয় হয় সেই জন্য সচেতন হতে হবে। যেসব মেয়েরা বিয়ের আগে বাবার জন্য অর্থ সঞ্চয়ে সহযোগিতা করে, অপচয় করেনা। তারা বিয়ের পরে স্বামীর সংসারেও এই গুণাবলীর বাস্তবায়ন করে। তাই স্বামীর বাড়ি যাওয়ার আগেই এসব গুন অর্জন করতে হবে। স্বামীর আদর, শশুর- শাশুড়ির আদর এত সহজে পাওয়া যায়না। যখন আপনার দ্বারা সত্যিকারেই স্বামীর উপকার হবে, তখন আপনাকে ভালবাসতে বাধ্য হবে।
১০। বড়দের সম্মান করা, ছোটদেরকে স্নেহ করাঃ বড়দের সম্মান করা এবং ছোটদের স্নেহ করা- এই গুন অবশ্যই একজন মেয়েকে বিয়ের পরে জনপ্রিয় করে তুলবে। তবে হঠাৎ করেই এসব গুন নিজের মধ্যে আসবেনা। নিজের বাবা-মাকে যে সম্মান করতে জানেনা, নিজের ছোট ভাই-বোনকে যে ভালবাসতে জানেনা সে কিভাবে স্বামীর বাড়ির বড়দেরকে সম্মান করবে, ছোটদের ভালবাসবে। তাই বিয়ের আগেই এসব গুন অর্জন করতে হবে।
১১। মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী থেকে দূরে থাকাঃ খুব সহজে সবার প্রিয় হওয়ার জন্য অনেকেই এসব মিথ্যা, গীবত বা চোগলখুরীতে অংশ নেয়। কিন্তু গীবতকারী সাময়িক সামনে প্রশংসা করলেও কিছুক্ষণ পরেই ঐ নববধুর নামেও গীবত করবে। তাই মিথ্যা না বলে সত্য কথা বলতে হবে, কম কথা বলতে হবে, গীবত করাই যাবেনা। চোগলখুরী ধরা পড়লে সবাই একসময় ঘৃণা করবে। নতুন বঊ অনেক সময় না বুঝে এসব কাজ করে, পরে সবাই একজোট হয়ে তাঁর পিছনে উঠে পরে লাগে। যদি প্রথম থেকেই নতুন বউ এসব ঝামেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখে- সে একসময় সবার প্রিয় হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
এসব কথা আমাদের জীবন থেকে, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলা। আপনার কন্যার জন্য বা কন্যা আপনি নিজে বিয়ের পরে একরাশ শান্তির জীবনের স্বপ্ন দেখছেন অথচ এটা খুবই কঠিন জিনিস। কিন্তু আপনার মধ্যে যদি কিছু উপকারী গুনাবলী থাকে যা ঐ পরিবারের উপকারে আসবে তাহলে কঠিন জিনিসকে মহান আল্লাহ আপনার জন্য সহজ করে দিবেন। আপনি হয়ে উঠবেন সবার প্রিয় পাত্র।