তাড়াতাড়ি বিয়ে করার উপকারিতা

তাড়াতাড়ি বিয়ে করার কিছু উপকারিতা আছে, তবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির জীবনযাত্রা, লক্ষ্য ও মানসিক প্রস্তুতির ওপর। অনেকেই দেরি করে বিয়ে করার পক্ষপাতী, কিন্তু ইসলামী দৃষ্টিকোণ, সামাজিক বাস্তবতা এবং মানসিক স্থিতিশীলতার দিক থেকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। আসুন জেনে নেই কিছু তাড়াতাড়ি বিয়ে করার উপকারিতা এবং কেন দ্রুত বিয়ে করা জরুরি হতে পারে: 

ইসলামে দ্রুত বিবাহ করার গুরুত্ব

ইসলামে বলা হয়েছে, যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তাদের দ্রুত বিয়ে করা উচিত। 

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:

وَأَنكِحُوا۟ ٱلْأَيَـٰمَىٰ مِنكُمْ وَٱلصَّـٰلِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَآئِكُمْ ۚ إِن يَكُونُوا۟ فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ ۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيم ٣٢

“আর তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহযোগ্য, তাদের বিবাহ সম্পন্ন কর। যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সম্পদশালী করবেন।” (সূরা আন-নূর, ৩২)

রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন:

“হে যুবকরা! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কারণ এটি দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং পবিত্রতা রক্ষা করে।” (সহিহ মুসলিম)

নৈতিকতা ও শুদ্ধ জীবনযাপন

বর্তমান সমাজে চারপাশে অনেক প্রলোভন ও অনৈতিক কার্যকলাপ রয়েছে। তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে একজন মানুষ তার জীবনকে সংযমী ও নৈতিকতার পথে পরিচালিত করতে পারে। ইসলামেও বলা হয়েছে, বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং অনৈতিক কাজ থেকে রক্ষা করে।

সামাজিক স্থিতিশীলতা

বিয়ের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি পারিবারিক দায়িত্ব নিতে শেখে, যা তাকে আরও পরিপক্ব ও দায়িত্বশীল করে তোলে। বিবাহিত ব্যক্তি সমাজে একটি স্থিতিশীল ভূমিকা পালন করে, যা সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।

একটি পরিবার গঠিত হলে তা সমাজের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। পরিবারবিহীন সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিবাহিত ব্যক্তিরা সাধারণত দায়িত্বশীল এবং সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া, বিবাহিত জীবন সামাজিক সম্প্রীতি এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাজকে আরও শক্তিশালী ও সুসংহত করে।

তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে একজন ব্যক্তি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করতে শেখে, যা সামাজিক সুস্থিতির জন্য অপরিহার্য। পরিবার গঠন ও দায়িত্ব গ্রহণের ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা কমে, পারস্পরিক সহমর্মিতা বৃদ্ধি পায় এবং পারিবারিক মূল্যবোধ সংরক্ষিত হয়।

মানসিক ও আবেগিক সমর্থন

জীবনের প্রতিটি ধাপে আমাদের মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য পাশে একজন বিশ্বস্ত জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন হয়। তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে এই সমর্থন আগেই পাওয়া যায়, যা মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

পরিবার ও সন্তান পালনের সুবিধা

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে কম বয়সে সন্তান জন্ম দিলে মা-বাবা উভয়ের জন্যই এটি স্বাস্থ্যকর। অল্প বয়সে মা-বাবা শারীরিকভাবে বেশি সক্রিয় ও স্বাস্থ্যবান থাকেন, যা সন্তান লালন-পালনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এছাড়া, সন্তানের সঙ্গে বয়সের পার্থক্য কম থাকলে বাবা-মা তাদের ভালোভাবে গাইড করতে পারে, তাদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অধিকন্তু, কম বয়সে সন্তান জন্ম দিলে বাবা-মা তাদের ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য আরও সহজে রক্ষা করতে পারেন।

ক্যারিয়ার ও জীবন পরিকল্পনা সহজ হয়

অনেকে মনে করেন যে ক্যারিয়ারের জন্য দেরিতে বিয়ে করা উচিত, কিন্তু তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একজন তার ক্যারিয়ার ও পারিবারিক জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে পরিচালনা করতে পারেন।

একজন বিবাহিত ব্যক্তি পারস্পরিক সমর্থন পেলে কর্মক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হতে পারেন। জীবনসঙ্গী মানসিক স্থিরতা বজায় রাখতে সাহায্য করেন, যা পেশাদার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাছাড়া, দাম্পত্য জীবনে দুইজন একসঙ্গে থাকলে আর্থিক পরিকল্পনা এবং লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনকে আরও ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারেন।

এছাড়াও কিছু দিক আবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো হলো: 

সম্পর্কের গভীরতা ও আবেগ ধরে রাখা

যদি আপনি ৩০-এর পর বিয়ে করেন, তখন জীবনের বাস্তবতা এবং দায়িত্ববোধ আপনাকে বেশি গম্ভীর করে তুলতে পারে। এতে সম্পর্কের মাঝে সেই স্বতঃস্ফূর্ততা ও আবেগ কমে যেতে পারে। অল্প বয়সে বিয়ে করলে আবেগের প্রভাব বেশি থাকে, যা দাম্পত্য জীবনকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলে।

একান্ত সময় কাটানোর সুযোগ

বেশি বয়সে বিয়ে করলে সন্তান নেয়ার দায়িত্ব দ্রুত চলে আসে, ফলে স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে কাটানোর সময় কমে যায়। কিন্তু তরুণ বয়সে বিয়ে করলে একে অপরকে জানার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়, যা সম্পর্ককে মজবুত ও মধুর করে তোলে।

জীবনসঙ্গীর সাথে পথচলা সহজ হয়

জীবনে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার জন্য একজন সঙ্গী থাকা সবসময়ই ভালো। দেরি না করে বিয়ে করলে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারেন, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

সন্তানের জন্য ভালো পিতা-মাতা হওয়ার সুযোগ

আগে বিয়ে করলে সন্তান বড় করার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। মানুষ এখন গড়ে কম বয়সেই মৃত্যুবরণ করে, তাই দেরিতে বিয়ে করলে সন্তান বড় হওয়ার আগেই পিতামাতার বার্ধক্য নেমে আসতে পারে। আগেভাগে বিয়ে করে ফেললে বাবা-মা হিসেবে সন্তানের পাশে বেশি সময় থাকা সম্ভব হয়।

সম্পর্ক পুনর্গঠনের সুযোগ

অল্প বয়সে বিয়ে করলে যদি কোনো কারণে সম্পর্ক টেকসই না হয়, তবে পুনরায় সম্পর্ক গুছিয়ে নেয়ার জন্য সময় থাকে। কিন্তু বেশি বয়সে বিয়ে করলে ডিভোর্সের পর নতুন করে জীবন শুরু করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

সামাজিক চাপ থেকে মুক্তি

আগে বিয়ে করলে পরিবার ও সমাজের চাপ কমে যায়। ‘কবে বিয়ে করবে?’, ‘বয়স তো বাড়ছে!’—এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়না। ফলে নিজের জীবনকে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে নেওয়া সহজ হয়।

উপসংহার

তাড়াতাড়ি বিয়ে করা মানেই হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়, বরং এটি সঠিক সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সুখ নয়, বরং সামাজিক ও ধর্মীয় স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাই, যদি আপনি মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকেন, তবে তাড়াতাড়ি বিয়ের কথা বিবেচনা করাই ভালো।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.