নিজের চাহিদা কমান, বিয়েকে সহজ করুন। বিয়ে দিন দিন জটিল হচ্ছে, কারণ কি?
কারণ অতিরিক্ত চাহিদা। পাত্র-পাত্রী পক্ষ সম্পর্কে বলছি। পাত্র-পাত্রীরা যে কি চায় সেটা বোঝাই কষ্ট।
কিছু তথ্য দিচ্ছি তাদের চাহিদা সম্পর্কে-
১। বয়সঃ পাত্রীরা চায় পাত্র তাঁর চাইতে ৫/৬/ বছরের বড় হোক। এর কম হলে সমস্যা আছে।
২। পেশাঃ সম্মানজনক পেশা হতে হবে। প্রথম পছন্দ সরকারি চাকুরি, ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার। এরপরে বেসরকারি চাকুরি। সরকারি এবং বেসরকারি খাতে বিভিন্ন রকমের পেশার মানুষ রয়েছে।
৩। উচ্চতাঃ পাত্রীরা চায় পাত্রদের উচ্চতা তাদের চাইতে ২/৩ ইঞ্চি কমপক্ষে বেশি হোক।
৪। পারিবারিক অবস্থাঃ ছোট পরিবার, শহুরে, ঝামেলা কম এমন পরিবার খোঁজেন তারা।
৫। ভাই বোনঃ পাত্রের ভাই বোন কম হলেই ভাল। তবে কেউ কেউ বেশি থাকাকে পছন্দ করেন।
৬। বাবা-মাঃ শ্বশুর বা শাশুড়ি থাকলে ভাল, না থাকলে আরো ভাল। কিন্তু কিছু পাত্রী এটা চান যে তাঁর শ্বশুর- শাশুড়ি থাকুক।
৭। শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ নিজের চাইতে সবসময় বেশি পড়াশুনা জানাকেই প্রাধান্য দেন পাত্রীরা
৮। আর্থিক অবস্থাঃ অবশ্যই আর্থিক অবস্থা ভাল হতে হবে। পাত্রীরা এই ব্যাপারে তেমন ছাড় দিতে চান না।
৯। ঠিকানাঃ পাত্রীরা বেশিরভাগ চান তাঁর বিয়ে যেন তার আশেপাশের জেলাতে বা নিজ জেলাতেই হয়
১০। সৌন্দর্য্যঃ পাত্রীরা বর্তমান খুব সৌন্দর্য সচেতন। সবাই চান স্মার্ট ও মানানসই ছেলেকে বিয়ে করতে
১১। ধার্মিকতাঃ ধার্মিকতার ব্যাপারে খুব কম আগ্রহী পাত্রীই বেশি পাওয়া যায়। অল্প কিছু পাত্রী ধার্মিকতা পছন্দ করেন।
এছাড়াও অনেক বিষয় থাকে যা মিলে না গেলে বিয়ে আর হয় না। আসলে এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার মন মানসিকতা থাকতে হবে।
যেমন যদি বয়স, উচ্চতা, আর্থিক অবস্থা মিলে যায় তখন শিক্ষাগত যোগ্যতা আর মিলেনা। দেখা যায় পাত্র অল্প শিক্ষিত কিন্তু সম্পদ আছে, দেখতে সুন্দর।
আবার দেখতে সুন্দর নয় কিন্তু শিক্ষিত ও সম্পদ আছে।
এত সব জটিলতার কারণে বিয়ে দেরি হয়। তাহলে উপায় কি?
উপায় হল রাছুলুল্লাহ (সা.) এর উপদেশ।
তিনি বলেছেন, বিয়ের সময় ৪ টি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে-
১। বংশ : আপনি কোন বংশের আর পাত্র পক্ষ কোন বংশের সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
২। আর্থিক অবস্থাঃ আর্থিক অবস্থায় উভয় পরিবারের মধ্যে মিল না হলেও কাছাকাছি থাকা দরকার।
৩। সৌন্দর্য্যঃ নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে, পছন্দ না হলে বিয়ে না করাই ভাল।
৪। ধার্মিকতাঃ ধার্মিকতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ধার্মিকতার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। উভয়ে ধার্মিক হলে ভাল।
এই চারটি মৌলিক বিষয় সামনে থাকলে নিজের জীবন সঙ্গী বাছাই করা সহজ হবে। তানাহলে বিভ্রান্ত হতে হবে। বিয়ে হতে সময় বেশি লাগবে।
বিয়ে প্রয়োজন, তাই বিয়ে করতে হবে। যেহেতু এর সাথে নিজের জীবনের ঘনিষ্ঠ অনেক বিষয় জড়িত থাকে, বিয়ের দ্বারা নতুন সম্পর্কের সৃষ্টি হয় যা যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে তাই আমরা একটু বেশি সচেতন হয়ে যাই। বেশি যাচাই ও বাছাই করি এই কারণে সময় বেশি লাগে।
তাই বলে এত বেশি যাচাই-বাছাই করা ঠিক না যেন নিজের বিয়ের সময় অতিক্রান্ত হয়ে যায়। উপরে উল্লিখিত পয়েন্ট সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা বলি-
বিয়েতে বয়সের ব্যাপারে সবাই খুব সচেতন, একটুও ছাড় দিতে চায়না অনেকেই। শুধু বিয়ে নিয়ে কিছু তথ্য দিচ্ছি, যেমন পাত্র মনে করে যে সে তাঁর চাইতে ৫/৬ বছরের কম বয়সের পাত্রীকে বিয়ে করবে। কারো চয়েজ অন্য ধরনেরও হতে পারে, তবে কম বয়সের হতেই হবে। পাত্রীও চাই তাঁর স্বামী তাঁর চাইতে বয়সে বড় হোক।
-কিন্তু কত বড় হবে? ৫ বছর/ ১০ বছর নাকি ১৫ বছর নাকি আরো বেশি।
এখানে আমাদের খুব কঠোর হলে চলবেনা। কারণ কেউ কেউ ৪০ বছরেও সুদর্শন ও সুঠাম থাকে কেউ আবার ৩০ বছরেও দেখতে অতটা সুন্দর মনে হয় না।
রাছুলুল্লাহ (সা.) ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়সী খাদিজা (রা.) কে বিয়ে করে সংসার করেছিলেন, একইভাবে ৫০ বছর বয়সে ৯ বছর বয়সী আয়েশা (রা.) এর সাথে সফল সংসার জীবন অতিক্রম করেছেন।
তাই বেশি বয়সের কোন ছেলে বা মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হলে হতাশ হবেন না। কারণ সবকিছু মিলে যাবেনা। যেমন, কেউ আপনাকে পছন্দ করলো, তাঁর চেহারা সুন্দর, আর্থিক অবস্থা ভাল, পড়াশুনা, উচ্চতা সব কিছু মিলে গেছে, শুধু বয়স একটু বেশি। তাহলে আপনার উচিত বিয়েতে রাজি হওয়া। কারণ আপনি যেমন বয়সের চাচ্ছেন সেই বয়সের শিক্ষিত, আর্থিক অবস্থা ভাল ছেলে আপনাকে পছন্দ নাও করতে পারে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষিত ছেলেদের স্বাবলম্বী হতে তুলনামূলক সময় বেশি লাগে। তাই বয়স বেশি হলেও যদি অন্যান্য যোগ্যতা থাকে আপনাকে পছন্দ করে তাহলে তাকেই বিয়ে করুন। সুখী হবেন, অন্তত আদর একটু বেশিই পাবেন। একইভাবে পাত্রদের প্রতি অনুরোধ কোননা কোন জায়গায় সবার ঘাটতি থাকবেই। যেমন পাত্রী পছন্দ হলে দেখা যাবে তাঁর পারিবারিক অবস্থা পছন্দ হবেনা বা সুন্দর হলে বয়সে/উচ্চতায় মিলবেনা। আবার যে পাত্রী সবদিকে ফিট থাকবে সে আপনাকে পছন্দ করবেনা।
তাই চাহিদা কমান, বিয়েকে সহজ করুন। কারণ শেষ শান্তির ফয়সালা মহান আল্লাহর হাতে। তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হবেন না।