বর্তমানে অনেকেই বিয়ের উপযুক্ত হলেই একজন ছেলে অথবা মেয়ে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে যায় এবং যাকে তার কাছে সেরা মনে হয় তার সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়-এই পদ্ধতিকে তারা সঠিক মনে করে এবং মনে করেন এটাই ভালো ভবিষ্যতের জন্য।
এর ফলে বিয়ের আগেই একজন ছেলে একাধিক মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে বা প্রেম করে। একইভাবে একজন মেয়েও একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্ক করে বাছাই করতে থাকে যে কে তার জন্য সেরা হবে। এভাবে আসলেও কি নিজের জীবন সঙ্গী বাছাই করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে? আপাত দৃষ্টিতে শুনতে ভাল মনে হলেও এই ধরণের চিন্তাধারায় ও যুক্তিতে কিছু খুঁত আছে।
নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পুর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেওয়া
কেউ যখন কোন একটি ফ্লাট বা গাড়ি বা অন্য আরো গুরুত্বপুর্ন বা দামী কিছু কিনতে চায় তখন সে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেয়। গাড়ি কিনতে চাইলে গাড়ির ব্যাপারে অভিজ্ঞ কারোর থেকে পরামর্শ নেওয়া বা তাকে সাথে নিয়ে গাড়ি কিনতে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। হয়তো যিনি গাড়ি কিনবেন তিনি গাড়ি স্টাইল, রং ইত্যাদি দেখে পছন্দ করতে পারেন কিন্তু সিদ্ধান্ত নেন ঐ অভিজ্ঞ ব্যাক্তির সাথে পরামর্শ করে।
তাহলে জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপুর্ন বিষয়, বিয়েতে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি অর্থাৎ বাবা-মা বা অভিভাবকের পরার্মশ না নেওয়া বোকামি নয় কি?
আবেগ তাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত
একজন ছেলে বা মেয়ে যখন বিয়ের জন্য শারীরিকভাবে প্রস্তুত হতে থাকে তখন তাদের ভিতরে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন বা মোহ থাকে। এই আকর্ষনের ফলে, সহজেই কাউকে সে কাছে পেতে চাইবে বা বিয়ে করতে চাইবে। কারণ তার ভাল-মন্দ বিচার করার মত অবস্থা থাকেনা। কিন্তু এই সময়ে যদি সে তার অভিভাবকের পরামর্শ নেয় তাহলে তারা কিন্ত আবেগ তাড়িত না হয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
মেয়ের ব্যবহার, চলাফেরা, প্রতিবেশী থেকে খোঁজ খবর নেওয়া, বাবা-মা কেমন লোক ইত্যাদি জেনে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। আর তাদের ভিতরে যেহেতু কোন আকর্ষন থাকবে না তার প্রতি তাই তারা নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
সম্পর্ক গড়ার সময় আসল রূপ বোঝা যায় না
বিয়ের আগে প্রেম বা সম্পর্কে জড়ানোর সময় কিন্ত ঐ মেয়ের বা ছেলের আসল ব্যবহারের ১০০ ভাগের ১০ ভাগও বুঝা যাবে না। কারণ সে যখন দেখা করবে তখন খুব সেজে গুজে আসবে, দামি পারফিউম ব্যবহার করবে। পজিটিভভাবে কথা বলবে- যাতে একে-অপরের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হয়। অথচ সে তার বাড়িতে নিজের মায়ের সাথে হয়তো অন্যরকম আচরণ করে, হয়তো অতটা ভাল পোশাক পরে না। প্রেমের সময়ে দেখা রূপটা কিন্তু তার পূর্ণাঙ্গ রূপ নয়।
অধিকাংশ সময়ে আসল রূপও নয়। একজন ছেলেও তার পছন্দের মেয়েকে খুশি করার উদ্দেশ্যে সুন্দর পোশাক পরে, চকোলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি পছন্দনীয় কিছু নিয়ে এসে সুন্দর ভাষায় নিজেকে উপস্থাপন করে।
তাই দেখা যায় বিয়ের আগে যারা একাধিক মেয়ে বা ছেলের সাথে প্রেম সম্পর্ক করে তারা বিয়ের পরে তেমন সুখী হতে পারেনা। কারণ তাদের বিয়ের পুর্বে এবং বিয়ের পরের আচরণে বিরাট পার্থক্য দেখা যায়। আর এটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ ছেলে আশা করে বিয়ের পরে তার স্ত্রী তাকে সুন্দর করে পুর্বের মত কথা বলবে, সেজে গুজে থাকবে। কিন্তু সংসারের বাস্তবতায় প্রকৃত রূপ ফুটে উঠে।
সম্পর্ক ভাঙলে ক্ষতি
ছেলে-মেয়েরা যদি এভাবে বিয়ের উদ্দেশ্যে একাধিক সম্পর্ক গড়ে তুলে, আর কিছুদিন মেলা-মেশা করে যদি ছেলে বিয়ে করতে রাজি না হয়, তখন ঐ মেয়ের মধ্যে হতাশা আসতে পারে। সে থেকে সব পুরুষদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হতে পারে। এভাবে সে মানসিকভাবে এমনকি শারীরিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অন্যদিকে মেয়ে যদি সম্পর্কের মাঝে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, তবে ছেলেটিকে হতাশা গ্রাস করতে পারে। সে আত্মবিদ্ধংসী হয়ে উঠতে পারে। হয়ে উঠতে পারে নারী বিদ্বেষী। এমনকি সে মেয়েটির ক্ষতি করতে উদ্যত হতে পারে।
অভিভাবকের দায়িত্ব
এসব সমস্যা সমাধানে অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। আগে থেকেই তাদের দায়িত্ব নিজের সন্তান যখন বিয়ের উপযুক্ত হয় তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া। এ ব্যাপারে তাদের সক্রিয় হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আবু সাঈদ ও ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যার কোন সন্তান আছে, সে যেন তার ভালো নাম রাখে এবং তাকে শিক্ষা দেয় কিভাবে পড়তে ও লিখতে হয়। আর যখন সে পরিপক্ক হবে তখন তাকে বিয়ে করানো উচিত। যখন সে পরিপক্ক হয়ে যায় এবং তা তাকে বিয়ে না করে, তখন ছেলেটি যদি পাপ করে তবে গুনাহ পিতার উপর বর্তাবে।” (আল-বায়হাকির শুআব আল-ইমান)
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পিতা-মাতা বা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিয়ে ঠিক নয়। বিশেষ করে মেয়েদের। এমনকি মেয়ে যদি কুমারী হয় আর স্পষ্টভাবে বিয়েতে রাজির ব্যাপারে সম্মতি না দিয়ে বা চুপ থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে বিয়েতে রাজি আছে।
আবূ সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না।
লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে। তিনি বললেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি। (বুখারিঃ ৫১৩৬ নং হাদিস, তাওহিদ পাবলিকেশন)
নিচের দেওয়া ভিডিও দেখলে আরো ভালো বুঝতে পারবেন।
বিয়ের আগে মেলা মেশা করে নিলে বিয়ে সফল হবার সম্ভাবনা কি বেশী?