বিয়েতে প্রতিবন্ধকতা এবং আমাদের করণীয়

বিয়ে নিয়ে একজন মানুষ সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখে। মানুষ চায় তার বিয়েটা আনন্দময় হোক, স্মরণীয় হোক। আর তাই যুবক বয়সে পৌছানোর পরেই সবাই  বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে, আর স্বপ্ন দেখতে থাকে। কিন্ত এই বিয়েতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় অনেক কিছু। সেই প্রতিবন্ধকতা এবং তার সম্ভাব্য সমাধান নিয়েই আজ আমরা আলোচনা করবো।

আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া

বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম বাধা হিসাবে আমরা এই আর্থিক সমস্যাকে চিহ্নিত করতে পারি। কারণ বিয়ের পরে শুরু হয় একটি নতুন জীবন। এই নতুন জীবনে থাকে কমপক্ষে দুইজন ব্যক্তি অর্থাৎ স্বামী আর স্ত্রী। এছাড়াও রয়েছে একজন বরের জন্য তার বাবা-মা, ভাই বোন সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আর্থিক ব্যয়ভারের দায়িত্ব। এসব কারণে আর্থিকভাবে নিজেকে স্বাবলম্বী করার চিন্তায় অনেক সময় বিয়ে বিলম্ব হয়ে যায়। এর সমাধান কী?

সমাধান হল এই যে পরিপূর্ণতা, যা দুনিয়ার জীবনে কখনই আসবেনা। তাই যেভাবে আছেন সেই অবস্থা থেকে বিয়ের সময় হলে বিয়ে করতে হবে। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে সমস্যা সমাধান করতে হবে। সহজভাবে চিন্তা করতে হবে, যে আপনার ঘরে নতুন এসেছে সেই একজন ব্যক্তির খাবারের ব্যবস্থা করা কি খুবই কঠিন? এক্ষেত্রে দুজনে মিলে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করলে পরস্পরের ভালবাসা বাড়বে।

বাংলাদেশি বিয়ে
পড়াশুনা

পড়াশুনাও অনেক সময় বিয়েতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা পড়াশুনায় ভাল, তাদের। কারণ, একজন ভাল ছাত্র ভালভাবে একের পর এক পরীক্ষায় ভালভাবে পাস করে যায়। যার ফলে তার বিয়ের বয়স হয়ে গেলেও অনার্স, মাস্টার্স শেষ করে আরও পড়ার মধ্যে ডুবে যায়। এতে বিয়ে করতে বিলম্ব হয়ে যায়। অথচ চাইলে পড়াশুনা চলাকালীন সময়ে বিয়ে করে দুজনে মিলে আয় রোজগারের সহজ ব্যবস্থা করেও সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।

স্বাস্থ্য

বিয়ের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া। স্বাস্থ্য অনেক সময় খারাপ থাকলেও বিয়ে বিলম্ব হয়। কারণ অসুস্থ ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা কেউ সহজে মেনে নিতে পারেনা।  বিয়ের জন্য শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ হতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে যে কেউ শারীরিক অথবা মানসিকভাবে অসুস্থ থাকতেই পারে, এই সুস্থতার জন্য প্রয়োজনে চিকিৎসা নিতে হবে কিন্তু তাই বলে এইজন্য বিয়ে দেরী করা ঠিক হবেনা। কারণ, পরিপূর্ণ সুস্থতা দুনিয়াতে সম্ভব নয়। তাই বিয়ের জন্য নিজেকে উপযুক্ত মনে করলেই চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে এবং বিয়েও করে ফেলতে হবে। হতে পারে বিয়ের পরে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের ভালবাসা এবং সেবা যত্নেও সুস্থতা আসতে পারে।

পারিবারিক অনুমতি

সন্তান বিয়ে করতে চায় কিন্তু বাবা-মা বা অভিভাবকেরা অনেক সময় মতামত দিতে চায়না। অনেক বাবা-মা মনে করে যে সন্তান এখনও বিয়ের উপযুক্ত হয়নি বা আর্থিকভাবে, বুদ্ধিতে এখনও অপরিপক্কতা রয়েছে। আরও জ্ঞান, বুদ্ধি এবং সম্পদশালী হওয়া দরকার। আবার অনেক পিতা-মাতাই আছেন যারা মনে করেন ছেলে বিয়ে করলে তাদের আর খোঁজ খবর নাও নিতে পারে, তাই তারা বিয়ের ব্যাপারে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে বিয়েতে বিলম্ব করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে বাবা-মাকে মনে করতে হবে তার সন্তানকে একদিন বিয়ে করাতেই হবে। তাই দেরী করে বরং বাবা-মা সন্তানের চোখে হেয় হয়ে যায়। আর ছেলেদের উচিৎ বাবা-মার কথাকে গুরুত্ব দেওয়া, কিন্তু একই সাথে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিয়ে সে অনুযায়ী বাস্তবায়নের চেষ্টা করা।

বিয়েতে প্রতিবন্ধকতাপছন্দ ও অপছন্দ

পছন্দ ও অপছন্দের বাছাই এর কারণেও অনেক সময় বিয়েতে বিলম্ব হয়। বিয়ের জন্য সব প্রস্তুতি শেষে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় এই বাছাই এর ক্ষেত্রে। বিশেষ করে যারা নিজের জন্য পূর্ব থেকে কাউকে পছন্দ করে না থাকেন তাদের জন্য। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে সবকিছু পরিপূর্ণ পাওয়া যাবেনা, কিছু না কিছু ঘাটতি থাকবেই। আর এসব অপূর্ণতা নিজে পরিপূর্ণ করে নিতে হবে।

একাধিক মতামত

ছেলের পছন্দ হয়েছে কিন্তু ছেলের বাবা-মায়ের পছন্দ হয়নি, তাই বিয়ে হবেনা। এভাবে পরিবারের সবার মতামত মিলাতে গিয়ে বিয়ে দেরী হয়। এক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হল পাত্রী বা পাত্র এর দ্বীনদারী, সততা, পরিশ্রমী কিনা, বিনয়ী কিনা ইত্যাদি। এসব বিষয়ের অর্ধেক বা একটু বেশি মিলে গেলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হবে। আর সবাই একমত হবে-এই আশা করাও ঠিক হবেনা।

বাসস্থান বা থাকার জায়গা

বিয়ের প্রস্তুতির মধ্যে অন্যতম একটি ব্যাপার হল স্বামী-স্ত্রীর জন্য আলাদা একটি থাকার জায়গা। কিন্তু যারা একটু ধনী বা আরাম আয়েশে থাকতে পছন্দ করেন, তারা এই একটি কক্ষের পাশাপাশি অনেক কিছুই আশা করেন। যেমন ড্রয়িং রুম, বারান্দা, ফুলের বাগান, বসার জায়গা ইত্যাদি। এই ক্ষেত্রেও প্রস্তুতির প্রয়োজন। অথচ দুইজনের আলাদা একটি থাকার মত কক্ষ হলেই বিয়ে করা যায়।

বিয়ের আয়োজন ও অন্যান্য খরচ

বিয়ের আয়োজন ও আনুষাঙ্গিক  খরচের কথা চিন্তা করেও বিয়ে দেরী হয়। যেমন কাকে দাওয়াত দেয়া হবে, কত লোকের জন্য আয়োজন করা হবে, কিভাবে করবে, কোথায় করবে, কি খাওয়াবে ইত্যাদি। এসব বাবদ অনেক টাকা খরচ করতেই হবে, এত বড় আয়োজন করার কথা চিন্তা করে তার প্রস্তুতির জন্যও অনেকে বিয়ে করতে সাহস পায় না বা নিজের প্রস্তুতিকে কম মনে করে। আর এ কারণে বিয়েতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বিয়ের সময় সবাইকে দাওয়াত দিতে হবে, বড় জমকালো বিয়ের অনুষ্ঠান করতেই হবে, আসলে তা জরুরী নয়।

তাই আসুন বিয়ে নিয়ে সহজভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করি। সময়মত বিয়ে করি, ভবিষ্যতের কথা আমরা কেউ জানিনা। তাই বেশি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে নিজের যা প্রস্তুতি আছে তাই নিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

শেয়ার করুন

2 thoughts on “বিয়েতে প্রতিবন্ধকতা এবং আমাদের করণীয়

  1. খুব সুন্দর লিখেছেন ধন্যবাদ আমার ১৯ বছর বয়স আমাকেও অনেকে বিয়ের কথা বলে আমি শারীরিকভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে চাই এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি। কার সাথে পর্দা করতে হবে কার সাথে পর্দা করতে হবে না এগুলো জানতে চাই দ্রুত বিয়ে হওয়ার কোন আমল জানালে ভালো হয়

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.