সফল দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রী উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শুধু স্ত্রী বা শুধু স্বামীর একক ভূমিকায় একটি সফল দাম্পত্য জীবন গড়ে ওঠেনা, হ্যাঁ কিছুটা কম বা বেশি ভূমিকা থাকতে পারে।
নীচে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেগুলো অনুশীলনের ফলে একজন মানুষ দায়িত্বশীল ও সফল স্বামীরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
জীবনসঙ্গীনীর জন্য নিজেকে সাজানোঃ
আমরা নিজেদের স্ত্রী কে সবসময় সুন্দর ও সাজানো গোছানো দেখতে পছন্দ করি। আমরা চাই যে আমাদের স্ত্রী সব সময় আমাদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে থাকবে, আমরা তাকে দেখে চোখ জুড়িয়ে নিবো, তার কথায় কাজে শুধু আকর্ষণ কাজ করবে। কিন্তু একথাও চিন্তা করা উচিত যে আমাদের সম্পর্কে ঠিক তদ্রূপ একজন স্ত্রী ও আশা করে যে তার স্বামী হবে সবসময় স্মার্ট, সুন্দর। আর দেখতে এবং কথায় ও কাজে অতুলনীয়।
অতএব, আমাদের উচিৎ সবসময় নিজের স্ত্রীর সামনে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা।
জীবনসঙ্গীনীর জন্য সুন্দর একটা নাম নির্বাচন করুনঃ
আদর্শ স্বামীর একটি সুন্দর অভ্যাস হল সে তার ভালবাসার মানুষের জন্য সুন্দর একটি নাম নির্বাচন করবে এবং সেই নাম ধরে তাকে ডাকবে। এতে পরস্পরের প্রতি আস্থা বাড়বে, ভালবাসা বাড়বে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মা আয়েশা(রাঃ)কে হুমায়রা বলে ডাকতেন।
স্ত্রীর গুণের মূল্যায়ণ করুনঃ
দুনিয়ার কোন মানুষই পরিপুর্ন নয়, সবার মধ্যেই কোন না কোন ভাল বা মন্দ দিক রয়েছে। একইভাবে আপনার স্ত্রীর মধ্যেও ভাল বা মন্দ রয়েছে, তবে অবশ্যই ভাল গুনের পরিমাণ বেশি হবে। তাই তার ভাল গুন গুলি খুঁজে বের করুন এবং তা প্রকাশ করে দিন। যেমন হতে পারে আপনার স্ত্রী ভাল রান্না করতে পারে, সে পরিশ্রমী, সত্যবাদী ইত্যাদি।
এভাবে যখন কোন গুনের প্রশংসা করবেন তখন তার মধ্যে লুক্কায়িত আরও ভাল গুনের প্রকাশ পাবে, ভালবাসা বাড়বে।
স্ত্রীর ভুলগুলো এড়িয়ে চলুনঃ
কেউ ভুলের বাইরে নয়, সবারই ভুল হয়। একইভাবে আপনার জীবনসঙ্গিনীরও ভুল হয় বা হতে পারে। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যেভাবেই হোক ভুলগুলোকে অতিরঞ্জিত না করে এড়িয়ে যান। এই যে আপনি তার ভুলকে ক্ষমা করে দিলেন, তেমন কিছু বললেন না-এটি তার অন্তরে আপনার প্রতি সম্মান বোধ বাড়িয়ে দিবে।
তাকে দেখে মুচকি হাসুনঃ
স্ত্রীকে দেখার সাথে সাথে একটু হাসার চেস্টা করুন। ফলে উভয়ের মধ্যে আন্তরিকতা, ভালবাসা বেড়ে যাবে। একে অপরকে সহজেই কাছে নিতে পারবেন। বোঝাপড়া সহজ হবে, কঠিন বিষয় সহজ হয়ে যাবে। হয়তো আপনি কোন পারিবারিক কঠিন সমস্যার কথা বলতে চাচ্ছিলেন যা শুনলে সহজে সমাধান করা যেত না। কিন্তু একটু হাসি বিনিময়ের কারনে কঠিন বিষয়ও সহজ হয়ে যাবে। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটু হাসুন।
স্ত্রীর কৃতজ্ঞতা আদায় করুনঃ
আমরা সাধারণত স্ত্রীর কাজের মূল্যায়ন করতে চাইনা। তার কাজের কোন স্বীকৃতি দিতে চাইনা। অথচ তার ভাল কাজের জন্য তাকে কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত, স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে স্ত্রী ঐ কাজ আরও আনন্দের সাথে বেশি করে করবে।
জীবনসঙ্গীনীকে খুশি করুনঃ
খুব সামান্য জিনিস দিয়ে হলেও স্ত্রীকে খুশি করার চেস্টা করুন। তারা খুব সামান্য বিষয়েই অনেক খুশি হয়। অন্তত তাকে সালাম দিন, ধন্যবাদ জানান, সরি বলুন, ভালবাসি বলুন। পারলে মাসে বা বছরে একবার হলেও কিছু গিফট করুন। এই সামান্য জিনিস পরিবারে অনেক পরিবর্তন বয়ে আনবে।
তার সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখুনঃ
আপনার জীবনসঙ্গিনীর প্রতি যত্নবান হোন। তার সুবিধা বা অসুবিধার প্রতি নজর দিন। সেও আপনার সুবিধার প্রতি যত্ন নিবে, অসুবিধাগুলো দূর করার চেষ্টা করবে।
স্ত্রীর সঙ্গে মজা করুনঃ
ইসলাম আমাদেরকে স্ত্রীর সঙ্গে মজা করতে উৎসাহিত করেছে।স্ত্রীর সঙ্গে আনন্দ করতে হবে, পবিত্রতার সাথে। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মুমীনিন আয়েশা (রাঃ) এর সাথে মজা করেছেন বিভিন্নভাবে। যেমন একবার তিনি আয়েশা(রাঃ) এর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিলেন। এসব ঘটনার দ্বারা তিনি আমাদেরকে স্ত্রীর সাথে মজা করতে, আনন্দ করতে উৎসাহিত করেছেন।
স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করুনঃ
আমাদের উচিত ঘরে এলেই স্ত্রীকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করা। এতে আপনার প্রতি স্ত্রীর সন্মান বেড়ে যাবে, ভালবাসা, আস্থা বেড়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে মা আয়েশা (রাঃ) কে ঘরের কাজে সহযোগিতা করতেন।
স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুনঃ
স্ত্রীর সঙ্গে সবচাইতে বেশি ভাল ব্যবহার করা উচিৎ। কারন স্ত্রী আমাদের জীবনের সবচাইতে বড় সঙ্গী। স্ত্রী যদি আপনার প্রতি খুশি থাকে তাহলে সকল কাজ আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে, আপনি সকল কাজে সহজে সফল হতে পারবেন।
প্রেম-ভালোবাসাময় আচরণ-উপস্থাপনঃ
স্ত্রী সাথে প্রেমময় আচরণ করতে হবে। তার প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে হবে।
পর নারীর সাথে কথা বলতে সাবধানতাঃ
স্ত্রীকেও যেমন পর্দা মানার ব্যবস্থা করতে হবে একই ভাবে নিজেকেও পর নারীর সাথে স্ত্রীর সামনে হেসে কথা বলা বা গোপনে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। স্ত্রী যদি বুঝতে পারে আপনি তার চেয়েও কোন নারীকে বেশি ভালবাসেন তাহলে সমস্যা হয়ে যাবে।
দায়িত্ব সচেতনতাঃ
স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ববান হতে হবে। তার সকল কাজের দায়িত্ব পুরুষকেই নিতে হবে।
গোপনীয়তা রক্ষাঃ
স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে গোপনীয়তা রক্ষা করে চলতে হবে। নিজেদের গোপন বিষয় কাউকে বলা যাবেনা। এতে আপনার প্রতি আপনার স্ত্রীর সম্মান কমে আসবে।
পরিবারের দায়িত্ব পালনকে ইবাদত মনে করাঃ
আমরা যত দুনিয়াতে টাকা পয়সা দান করি সব কিছুর বিনিময় মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে পাবো। কিন্তু পরিবারের প্রতি যে খরচ করবো তার সওয়াব সব চেয়ে বেশি পাবো। অর্থাৎ পরিবার পরিজনের প্রতি যে খরচ করা হয় সেজন্যও আমরা পুরস্কার পাব। তাই আমরা বলতে পারি পরিবারের দায়িত্ব পালন করাও একটি ইবাদত।
স্ত্রীকে বান্ধবী, জীবন সঙ্গিনী ও ঘরের প্রধান হিসেবে বিবেচনা করাঃ
নিজ স্ত্রীকে শুধু জীবন সঙ্গিনীই নয় নিজের ঘরের প্রধান মনে করতে হবে। কারন ঘরের যাবতীয় কাজ সেই সমাধা করে তাই তাকে প্রাধান্য দিতে হবে, তার মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
পারিবারিক প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করাঃ
পরিবারের প্রতিটি কাজে স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করতে হবে। এতে পরস্পরের প্রতি আস্থা বাড়বে, ভুল-বুঝাবুঝি কম হবে।
এসব অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা নিজেকে একজন সফল স্বামী হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবো। সফল দাম্পত্যের জন্য যে অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা জরুরী সে সম্পর্কে আরো জানতে এই ব্লগটি পড়ুন।
পোষ্টটি ভালো লাগল, ধন্যবাদ।